ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই ওমানের মাসকাটে অনুষ্ঠিত হলো এক ব্যতিক্রমী লড়াই—বিচ হ্যান্ডবলে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দেশের জাতীয় দল। যদিও ম্যাচটি মাঠে গড়ানো নিয়েই ছিল অনিশ্চয়তা ও বিতর্ক, শেষ পর্যন্ত ভারত ম্যাচে অংশ নিয়েছে এবং ২-০ সেটে পাকিস্তানের কাছে হেরে গেছে।
এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে বৃহস্পতিবার ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামে ভারতীয় দল। প্রথম সেটে ৩৪–৬ এবং দ্বিতীয় সেটে ৩৬–৭ ব্যবধানে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত হয় তারা।
ভারতের হ্যান্ডবল ফেডারেশনের (এইচএফআই) নির্বাহী পরিচালক আনন্দেশ্বর পান্ডে ম্যাচ পরবর্তী এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা এই ম্যাচটি খেলতে বাধ্য ছিলাম। কারণ ম্যাচ বয়কট করলে আমাদের ১০ হাজার মার্কিন ডলার জরিমানা এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ২ বছরের নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা ছিল। এশিয়ান হ্যান্ডবল ফেডারেশন আমাদের স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, না খেললে তা অলিম্পিক চার্টারের চেতনার পরিপন্থী হিসেবে বিবেচিত হবে।”
তিনি আরও জানান, ম্যাচ খেলতে গিয়ে ভারতীয় খেলোয়াড়েরা প্রতিবাদস্বরূপ কালো বাহুবন্ধনী পরে মাঠে নামেন। তবে আয়োজকেরা তৎক্ষণাৎ তা খুলে ফেলতে বলেন এবং কোচিং স্টাফকে সতর্ক করেন—এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তাদের টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হতে পারে।
ম্যাচের আগে পাকিস্তানের সঙ্গে না খেলার পক্ষে ছিল ভারতের হ্যান্ডবল দল। কিন্তু আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের নিয়ম, জরিমানা ও নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির কারণে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়।
উল্লেখযোগ্যভাবে, ম্যাচের সময় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলেই জানান আনন্দেশ্বর পান্ডে। তিনি বলেন, “আমরা ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও অলিম্পিক অ্যাসোসিয়নের কাছে নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, কিন্তু কোনো নির্দেশনা পাইনি। ফলে আমাদের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার কথা বিবেচনা করেই মাঠে নামতে হয়।”
উল্লেখ্য, ৬ মে শুরু হওয়া এশিয়ান বিচ হ্যান্ডবল চ্যাম্পিয়নশিপে এবার অংশ নিয়েছে ৯টি দল। এই প্রতিযোগিতা থেকেই ২০২৬ সালের বিচ হ্যান্ডবল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করবে শীর্ষ দল। ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ফের সেমিফাইনাল বা ফাইনালে মুখোমুখি হতে পারে ভারত। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান কী হবে, সে বিষয়ে আনন্দেশ্বর বলেন, “পরবর্তী ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলব কি না, তা নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার ওপর। যদি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না আসে, তাহলে দলকে ম্যাচ ছেড়ে দিতে বলা হবে।”
সাম্প্রতিক কাশ্মীর সীমান্তে পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে ভারতের আইপিএল ও পাকিস্তানের পিএসএল স্থগিত হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে দুই দেশের ক্রীড়াঙ্গনে সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠেছে। ফলে রাজনৈতিক চাপ ও ক্রীড়া সংস্থাগুলোর বিধিনিষেধের দ্বন্দ্বে ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ম্যাচটি শুধু একটি খেলার প্রতিযোগিতা নয়, বরং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতার জটিল সমীকরণের একটি প্রতিচ্ছবি।
Leave a comment