নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনগঞ্জ এলাকায় বসুন্ধরা সিমেন্ট কারখানায় ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণে ছয় শ্রমিক দগ্ধ হয়েছেন। শনিবার (২২ নভেম্বর) রাত ৭টার দিকে কারখানার বয়লার রুমে চুল্লিতে কয়লা দেওয়ার সময় আকস্মিক বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনায় দগ্ধদের উদ্ধার করে দ্রুত রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
দগ্ধ শ্রমিকরা হলেন—ফেনীর নাহিদ হাসান (২২), পাবনার কামাল হোসেন (৪৫), নোয়াখালীর তাইজুল ইসলাম (৩৫), জামালপুরের ফেরদৌস (৩৫), কুষ্টিয়ার তোরাব আলী (৫৫) এবং নারায়ণগঞ্জের আতিকুর রহমান (৪২)।
দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে আসা আবদু রহিম জানান, বিস্ফোরণের আগে হঠাৎ বিকট শব্দ শোনা যায়। মুহূর্তের মধ্যে বয়লার রুম জুড়ে আগুনের শিখা ও উত্তপ্ত কয়লা ছড়িয়ে পড়ে। পরে উপস্থিত শ্রমিকরা আহত ছয়জনকে উদ্ধার করে বাইরে নিয়ে আসে। তিনি বলেন, “বয়লার ফেটে চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আমরা দেখেছি তাদের পোশাক গলে গেছে। দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাই।”
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান জানান, ছয়জন শ্রমিকই গুরুতরভাবে দগ্ধ হয়েছেন। আগুনের তাপে শুধু ত্বক নয়, অনেকের শ্বাসনালিও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নাহিদ হাসান—৪০% দগ্ধ ,কামাল হোসেন—২৬% দগ্ধ, তাইজুল ইসলাম—১২% দগ্ধ ,ফেরদৌস—১০% দগ্ধ ,তোরাব আলী—১৬% দগ্ধ ,আতিকুর রহমান—২৭% দগ্ধ হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানান, শ্বাসনালি পোড়া রোগীরা সাধারণত বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। ধোঁয়া ও উত্তপ্ত গ্যাস ফুসফুসে প্রবেশ করায় অনেক সময় জটিলতা বাড়তে পারে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চুল্লিতে কয়লা দেওয়ার সময় অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে উত্তপ্ত কয়লা ছিটকে পড়েছিল। এতে কাছাকাছি থাকা শ্রমিকদের শরীরে আগুন ধরে যায়। তিনি বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। মূলত বয়লার রুমে চাপ নিয়ন্ত্রণের সমস্যা অথবা অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে বিস্ফোরণ হতে পারে। তদন্তে সঠিক কারণ জানা যাবে।”
এই ঘটনায় শিল্প এলাকায় বয়লার নিরাপত্তা ইস্যু ফের আলোচনায় এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের অনেক শিল্পকারখানায় নিয়মিত বয়লার পরিদর্শন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং প্রশিক্ষণের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে উচ্চতাপমাত্রায় কাজ করা শ্রমিকদের জন্য কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি।
Leave a comment