ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সোনালি অধ্যায়ের নাম নায়ক জসিম। খলনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সিনেমার প্রথম “অ্যাকশন হিরো”।
আজ (৮ অক্টোবর) এই কিংবদন্তি অভিনেতার প্রয়াণের ২৭ বছর পূর্ণ হলো। ১৯৯৮ সালের এই দিনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তিনি না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
🎬 খলনায়ক থেকে নায়ক
জসিমের চলচ্চিত্রজীবনের শুরুটা সহজ ছিল না। প্রথমদিকে তিনি কাজ করতেন ‘এক্সট্রা আর্টিস্ট’ হিসেবে। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম ও প্রতিভার জোরে ধীরে ধীরে তিনি জায়গা করে নেন মূলধারার চলচ্চিত্রে।
১৯৭২ সালে ‘দেবর’ সিনেমার মাধ্যমে রূপালি পর্দায় তার আনুষ্ঠানিক অভিষেক ঘটে।
খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেই দর্শকদের নজর কাড়েন তিনি, পরে পরিণত হন ঢাকাই সিনেমার সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকশন হিরোতে।
⚔️ মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেমিক নায়ক
শুধু পর্দার নায়ক নন, বাস্তব জীবনেও ছিলেন এক মুক্তিযোদ্ধা।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ নম্বর সেক্টরে মেজর হায়দারের নেতৃত্বে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন জসিম।
তার স্মৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) জসিমের নামে স্থাপন করেছে ‘মুক্তিযোদ্ধা চিত্রনায়ক জসিম ফ্লোর’।
🌟 চলচ্চিত্রজীবনে সাফল্যের শিখরে
প্রায় ১২০টির বেশি সিনেমায় নায়ক হিসেবে এবং ৭০টির বেশি ছবিতে খলনায়ক হিসেবে জসিম অভিনয় করেছেন ।
তার উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে—‘রংবাজ’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘মহেশখালির বাঁকে’, ‘বারুদ’, ‘কাজের বেটি রহিমা’, ‘বদলা’, ‘কসাই’, ‘বাহাদুর’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘মাস্তান রাজা’, ‘স্বামী কেন আসামি’ ইত্যাদি।
অভিনয়ের পাশাপাশি তার অ্যাকশন দৃশ্যের বাস্তবতা ও নিপুণতা তাকে দর্শকের হৃদয়ে স্থায়ী আসন দিয়েছে। অনেকেই তাকে “বাংলা সিনেমার সিলভেস্টার স্ট্যালন” বলেও আখ্যা দেন।
❤️ পরিবার ও ব্যক্তিজীবন
নায়ক জসিমের প্রথম স্ত্রী ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুচরিতা।
পরবর্তীতে তিনি নাসরিন জসিমকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির তিন ছেলে— এ কে সামি, এ কে রাতুল ও এ কে রাহুল।
দুঃখজনকভাবে, গত ২৭ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার মেজ ছেলে এ কে রাতুল, যিনি ব্যান্ড ‘ওন্ড’-এর ভোকালিস্ট ও শব্দ প্রকৌশলী ছিলেন।
🌹 স্মরণে নায়ক জসিম
দীর্ঘ ২৭ বছর পরেও দর্শক ও সহকর্মীরা ভুলতে পারেননি এই মহান অভিনেতাকে। তার কর্মনিষ্ঠা, দেশপ্রেম এবং অসাধারণ অভিনয় দক্ষতা এখনো অনুপ্রেরণা জোগায় নতুন প্রজন্মের শিল্পীদের।
Leave a comment