আফ্রিকার বৃহত্তম দেশ নাইজেরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০০ জন জিহাদি যোদ্ধা। দেশটির লেক চাদ-সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদ্বন্দ্বী দুটি জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম ও ইসলামিক স্টেট ওয়েস্ট আফ্রিকা প্রদেশ (আইএসডব্লিউএপি)-এর মধ্যে রক্তক্ষয়ী এই সংঘর্ষ ঘটেছে বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে। সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রবিবার (৯ নভেম্বর) ভোর থেকে লেক চাদের কাছের ডোগন চিকু এলাকায় দুই জঙ্গি গোষ্ঠীর মধ্যে তীব্র লড়াই শুরু হয়, যা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে চলেছে ।
এএফপি জানায়, ২০১৬ সালে মতাদর্শগত মতভেদের কারণে বোকো হারাম থেকে আইএসডব্লিউএপি আলাদা হয়ে যায়। তারপর থেকেই দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে এলাকা নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক সম্পদ ও নেতৃত্বের প্রশ্নে তীব্র দ্বন্দ্ব চলছে।
নাইজেরিয়ার সেনাবাহিনীকে সহায়তাকারী মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সদস্য বাবাকুরা কোলা বলেন,“আমাদের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষে প্রায় ২০০ জন বোকো হারাম যোদ্ধা নিহত হয়েছে। সংঘর্ষটি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ এবং দীর্ঘস্থায়ী।”
তবে বোকো হারামের এক সাবেক সদস্য—যিনি বর্তমানে সহিংসতা ত্যাগ করে স্থানীয়ভাবে জিহাদি তৎপরতা পর্যবেক্ষণ করছেন—তিনি বিপরীত দাবি করে বলেন,“প্রায় ২০০ জন আইএসডব্লিউএপি সদস্য নিহত হয়েছেন, তাদের কয়েকজনের অস্ত্রও জব্দ করা হয়েছে।”
তার ভাষ্য অনুযায়ী, বোকো হারাম তাদের মাত্র চারজন সদস্যকে হারিয়েছে, যদিও এ সংখ্যা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।বোকো হারামের সাবেক ওই সদস্য, যিনি ‘সাদিকু’ নাম ব্যবহার করেন, বর্তমানে বর্নো রাজ্যের রাজধানী মাইদুগুরিতে অবস্থান করছেন। তিনি বলেন,“দুই গোষ্ঠীর মধ্যে এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হতে যাচ্ছে। তারা এখন একে অপরের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে লিপ্ত।”
নাইজেরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা এএফপিকে বলেন,“আমরা সংঘর্ষ-পরবর্তী পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। এখন পর্যন্ত ১৫০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে, তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।” লেক চাদ অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরেই নাইজেরিয়ার জিহাদি কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দু, যেখানে বোকো হারাম ও আইএসডব্লিউএপি উভয় গোষ্ঠী সক্রিয়।
২০১৬ সালে বিভক্তির পর থেকে আইএসডব্লিউএপি নিজেদেরকে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর আঞ্চলিক শাখা হিসেবে দাবি করে আসছে, আর বোকো হারাম তাদের মূল উগ্রপন্থী আদর্শে অনড় রয়ে গেছে। দুই গোষ্ঠীর মধ্যকার সংঘাতের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীও ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে।
নাইজেরিয়ায় বোকো হারাম ২০০৯ সাল থেকে সক্রিয়। গোষ্ঠীটি পশ্চিমা শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে ‘নিষিদ্ধ’ হিসেবে ঘোষণা করে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের হামলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার মানুষ নিহত এবং ২০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। অন্যদিকে, আইএসডব্লিউএপি গোষ্ঠী সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বোকো হারাম ও সরকারি বাহিনীর ওপর একযোগে আক্রমণ চালিয়ে তাদের প্রভাব বিস্তার করেছে। নাইজেরিয়ার সরকার এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ সংঘর্ষ নিয়ে কোনো বিবৃতি দেয়নি।
Leave a comment