নওগাঁ শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দুই মাথা নিয়ে এক নবজাতকের জন্ম হয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে বিরল ঘটনাগুলোর অন্যতম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শহরের প্রাইম ল্যাব হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে শিশুটির জন্ম হয়। তবে জন্মের মাত্র এক ঘণ্টা পর জটিলতা বেড়ে গেলে শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। জন্মের মুহূর্ত থেকেই চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ চেষ্টা সত্ত্বেও নবজাতককে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
শিশুটির বাবা রকি এবং মা আরিফা—উভয়েই নওগাঁ পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চকপ্রসাদ কলিপাড়ার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রসববেদনা শুরু হলে আরিফাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকের সিদ্ধান্তে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যাশিশুর জন্ম হয়, যার শারীরিক গঠন স্বাভাবিক নবজাতকের তুলনায় ভিন্ন ছিল।
পারিবারিক সূত্র ও হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানান, নবজাতকের দেহ ছিল একটাই, কিন্তু মাথা ছিল দুটি। দুটি মুখমণ্ডলে ছিল চারটি চোখ, দুটি নাক, দুটি মুখ ও চারটি কান। তবে এটি যমজ শিশুর মতো দ্বৈতদেহ ছিল না; পুরো শরীর ও যৌনাঙ্গ ছিল একটিই।
চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী, এ ধরনের জন্মগত অস্বাভাবিকতাকে “Dicephalic parapagus” বা দ্বিমস্তিষ্কী সংযুক্ত জন্ম বলা হয়, যা পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলে অত্যন্ত বিরল ঘটনা।
প্রাইম ল্যাব হাসপাতালের সহকারী পরিচালক সারওয়ার কামাল চঞ্চল বলেন,
“শিশুটির দুটি মাথা থাকলেও এটিকে যমজ বলা যাবে না। এর দেহ ছিল একটাই, শুধু মাথার অংশে দ্বিমুখী গঠন দেখা গেছে। জন্মের পরপরই শ্বাসপ্রশ্বাসসহ অন্যান্য জটিলতা দেখা দেয়, তাই তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। সব চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।”
জন্মের পর নবজাতকের অক্সিজেন লেভেল দ্রুত কমে যেতে শুরু করে এবং মস্তিষ্ক ও দেহের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংযোগ স্থাপনে সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসক সারওয়ার কামাল বলেন,“আমরা ন্যূনতম সময়ের মধ্যে শিশুটির জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করেছি। কিন্তু এ ধরনের জন্মগত গঠনে সাধারণত বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম থাকে।”
শিশুটির জন্মের খবর হাসপাতালের ভেতরে ও আশপাশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়দের মধ্যে কৌতূহল বাড়লেও পরিবারের মধ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রথম সন্তান হারানোর দুঃখে বাবা–মা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। পরিবারের এক আত্মীয় জানান, “শিশুটি জীবিত থাকবে—এই আশা নিয়ে আমরা সবাই অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে হারালাম। মা–বাবা কেউই শোক সামলাতে পারছেন না।”
Leave a comment