সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব মুহাম্মদ আশরাফুল আলম খোকন ও তার স্ত্রী মিসেস রিজওয়ানা নুরের বিরুদ্ধে ১৬ কোটি ৪২ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৩ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
দুদকের এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসাধু উপায়ে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ৯৮ হাজার ৮২৭ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে আশরাফুল আলম খোকনের বিরুদ্ধে। এছাড়া, তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭২ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। দুদকের দাবি, মানিলন্ডারিংয়ের মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক শহরে একটি বাড়ি ক্রয় করেছেন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন-২০০৪, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন-১৯৪৭ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২-এর বিভিন্ন ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
অন্যদিকে, পৃথক মামলায় খোকনের স্ত্রী রিজওয়ানা নুরের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৮ লাখ ৮১ হাজার ৫৬ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৬ কোটি ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৩৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্যও উল্লেখ করেছে দুদক।
ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গত বছরের আগস্টে দুদক খোকনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে এবং একই বছরের ৯ অক্টোবর তার বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদালত। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, আশরাফুল আলম খোকন দ্বৈত নাগরিকত্ব ধারণ করেন—তিনি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের নাগরিক। ২০১৩ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে পদত্যাগ করেন।
তবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় আশরাফুল আলম খোকন এই অভিযোগগুলোকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি লিখেছেন, “শুনলাম, দুদক আমার বিরুদ্ধে ১৩ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা করেছে! অভিযোগের ভিত্তিতে আমেরিকায় আমার বাড়ির বর্তমান বাজারমূল্য ১৩ কোটি টাকা। কিন্তু তারা কী জানে, আমি আমেরিকায় বাড়ির মালিক হয়েছি ২০১১ সালে, আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগ দিয়েছি ২০১৩ সালে?”
তিনি আরও দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ১০% ডাউনপেমেন্ট দিয়ে বাড়ি কেনা যায় এবং বাকি অর্থ ৩০ বছরে শোধ করতে হয়। এছাড়া, তার ব্যাংক লেনদেন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি, “তারা বলছে, আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১ কোটি ৩৪ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। কিন্তু হিসাবটা কীভাবে বানিয়েছে? ৬৭+ লাখ টাকা জমা হয়েছে, ৬৬+ লাখ উত্তোলন হয়েছে—এই দুই যোগ করেই বলছে ১ কোটি ৩৪ লাখ! তার ওপর, এই পুরো ৬৭ লাখ টাকাই আমার বেতন এবং প্রবাসে থাকাকালীন রেমিট্যান্স পাঠানোর টাকা।”
দুদকের মামলার বিষয়ে আশরাফুল আলম খোকনের এই প্রতিক্রিয়ার পর বিষয়টি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে।
Leave a comment