চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় পুলিশের ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত কনস্টেবল শামিম রেজার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের এক মাসের বেশি সময় পর তাঁর সাত সহকর্মীর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের বাবা মো. হাসেম আলী ফরাজী আজ মঙ্গলবার দুপুরে দর্শনা থানা আমলি আদালতে এ মামলা করেন। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)।
চুয়াডাঙ্গা আদালত পুলিশের পরিদর্শক নাসির উদ্দিন মৃধা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম মামলার অভিযোগ গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় কনস্টেবল শামিম রেজার সাতজন সহকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তারেক মাহমুদ, লাভলুর রহমান, মো. মিঠুন হোসেন, মো. সহিদুল ইসলাম, কনস্টেবল মেহেদী হাসান, ইমিগ্রেশন বিভাগের ইনচার্জ সহকারী পরিদর্শক (এসআই) মো. রমজান আলী ও কনস্টেবল মো. সোহেল রানা।
নিহত শামিম রেজা কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ঝুটিয়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি চুয়াডাঙ্গার দর্শনা জয়নগর আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে কর্মরত ছিলেন এবং চেকপোস্টের নতুন ভবনের দোতলায় সহকর্মীদের সঙ্গে বসবাস করতেন। গত ১৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি ‘আত্মহত্যা’ বলে ধরে নিয়ে দর্শনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হয়। তবে নিহতের পরিবারের দাবি ছিল, এটি আত্মহত্যা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।
আজ আদালতে দায়ের করা মামলায় বাদী দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে বিবাহিত এবং পাঁচ বছর বয়সী একটি সন্তান রয়েছে। শামিমের সঙ্গে স্ত্রী বা পরিবারের কোনো বিরোধ ছিল না। দর্শনা ইমিগ্রেশনে বদলি হওয়ার পর থেকেই সহকর্মীরা তাঁর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করতেন। মামলায় বলা হয়, একাধিক সহকর্মী তাঁকে মানসিক চাপে রাখতেন, অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতেন এবং হত্যার হুমকি দিতেন।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, মৃত্যুর আগের দিন, ১৭ এপ্রিল রাতে কনস্টেবল শামিম রেজা তাঁর সহকর্মী ও একই গ্রামের বাসিন্দা সোহেল রানাকে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকির বিষয়টি জানান। তবে সোহেল রানা তা পরিবারের কাউকে না জানিয়ে উল্টো অন্যান্য অভিযুক্তদের জানিয়ে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিযুক্তরা শামিমকে রাত পৌনে ১১টার পর কোনো এক সময় হত্যা করে তাঁর মরদেহ সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।
শামিম রেজার মৃত্যুর পর থেকে তাঁর পরিবার দাবি করে আসছিল, এটি আত্মহত্যা নয় বরং হত্যাকাণ্ড। পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে একটি নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে আসছিল। মামলার তদন্তভার সিআইডির হাতে গেলে ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন নিহতের স্বজনরা।
Leave a comment