তুরস্কের একটি সামরিক পরিবহন বিমান জর্জিয়া–আজারবাইজান সীমান্তের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে ২০ সেনা নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুরে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে । তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জর্জিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উভয় দেশ থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, তুর্কি বিমানবাহিনীর একটি সি-১৩০ (C-130) মডেলের কার্গো বিমান আজারবাইজান থেকে দেশে ফেরার পথে হঠাৎ রাডার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরে সীমান্তবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে এটি বিধ্বস্ত হয়। খারাপ আবহাওয়া ও যান্ত্রিক ত্রুটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
দুর্ঘটনাস্থলটি আজারবাইজান সীমান্ত থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে জর্জিয়ার ভূখণ্ডে অবস্থিত। ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় উদ্ধারকর্মীরা আগুন নেভানোর পর ধ্বংসস্তূপ থেকে ২০ জন সেনার মরদেহ উদ্ধার করেন। নিহতদের সবাই তুরস্কের বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে তুর্কি কর্তৃপক্ষ।
তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার ও তদন্ত দল ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। জর্জিয়া সরকারের সহযোগিতায় যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, বিমানটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম ও সরবরাহ বহন করছিল।
তুরস্কের সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর সেরকান ইয়িলমাজ বলেন,“আমাদের সাহসী সহকর্মীদের হারানো অপূরণীয় ক্ষতি। বিমানটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গিয়েছিল। আমরা প্রতিটি সম্ভাব্য কারণ খতিয়ে দেখছি।”
দুর্ঘটনার খবরে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান। রাজধানী আঙ্কারায় এক অনুষ্ঠানে তিনি নিহত সেনাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেন,“তুরস্কের প্রতিটি নাগরিক আজ শোকাহত। যারা দেশের সেবায় জীবন উৎসর্গ করেছেন, তাদের আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।”
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের ঘোষণা দিয়েছেন। দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও তুরস্কের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
সি-১৩০ হারকিউলিস বিমানটি বিশ্বের অন্যতম নির্ভরযোগ্য সামরিক পরিবহন উড়োজাহাজ হিসেবে পরিচিত। গত ছয় দশক ধরে এটি বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে এর বেশ কিছু পুরোনো মডেল বর্তমানে আধুনিকীকরণের প্রয়োজনীয়তার মুখে রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো বিমানে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও সফটওয়্যার আপডেটের অভাব দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
Leave a comment