বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও দেশের অন্যতম সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল আসন্ন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশের শীর্ষ ক্রিকেটারদের একজন হিসেবে বিপিএলের প্রতিটি আসর মাতানো তামিম এবারই প্রথম ড্রাফ্ট থেকে নিজের নাম প্রত্যাহারের অনুরোধ করেছেন। ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ বছর ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিপিএল প্লেয়ার্স ড্রাফ্টের আগে তামিম নিজেই টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত জানান। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, আমি বিপিএলে অংশ নিচ্ছি না। আমি শাহরিয়ার নাফীসকে ড্রাফ্ট থেকে আমার নাম সরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছি।” তাঁর এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর ক্রিকেট মহলে শুরু হয় আলোচনা—কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত?
৩৬ বছর বয়সী তামিম চলতি বছরের মার্চের পর থেকে আর কোনো ধরনের প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেননি। ঘরোয়া একটি ম্যাচ চলাকালে তিনি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন। এরপর থেকেই চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও বিশ্রামের মধ্যে দিয়ে কাটছে তাঁর সময়। মাঠে ফেরার ইঙ্গিত কয়েকবার দিলেও এখনও শতভাগ প্রস্তুত নন বলে জানা গেছে। বিপিএলের মতো ব্যস্ত সূচি, ভ্রমণ এবং টানা ম্যাচ খেলার চাপ তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া কঠিন—এই বাস্তবতাই তাঁকে সরে দাঁড়াতে প্রভাবিত করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গত দুই মৌসুমে ফরচুন বরিশালের হয়ে নেতৃত্ব ও ব্যাটিং—দুই ভূমিকাতেই উজ্জ্বল ছিলেন তামিম। তার ধারাবাহিকতা ও অভিজ্ঞতা দলের শিরোপা জয়ে ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এবারের আসরে বরিশাল দল অংশ নিচ্ছে না। নিজ দলের অনুপস্থিতি তামিমের সিদ্ধান্তকে আরও সহজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিচিত পরিবেশ, পরিচিত টিম ম্যানেজমেন্ট ও দীর্ঘদিনের ক্রিকেট সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুন দলের হয়ে বিপিএলে খেলা—এটিও হয়তো এই মুহূর্তে তাঁর কাছে অনুকূল মনে হয়নি।
গত কয়েক মাসে খেলোয়াড় তামিমের পাশাপাশি প্রশাসক তামিমকেও দেখা যাচ্ছে বারবার। বিসিবি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরে ‘সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ’ তুলে নির্বাচনে না দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন।
২০১২ সালে বিপিএলের প্রথম আসর থেকে শুরু করে প্রতিটি মৌসুমেই তামিম ইকবাল ছিলেন। টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানসংগ্রহকারীদের একজন তিনি। ব্যাট হাতে স্থিতিশীলতা, স্পিন-বান্ধব উইকেটে টেকনিক্যাল দক্ষতা এবং দীর্ঘমেয়াদি পারফরম্যান্স তাঁকে বিপিএলে অন্যদের থেকে আলাদা করেছে।
গত দুই মৌসুমে ফরচুন বরিশালের শিরোপা জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে তিনি আবারও প্রমাণ করেছিলেন যে, বিপিএল তাঁর পরিচিত মঞ্চ।
তামিম ভক্তরা তাঁর এই সিদ্ধান্তে খুব একটা অবাক নন। কারণ, শারীরিক অবস্থার কথা জেনে তাঁরা আগেই বুঝেছিলেন যে কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরা কঠিন হবে। তবে বিপিএলে তাঁর অনুপস্থিতি টুর্নামেন্টের আকর্ষণ কিছুটা হলেও কমাবে—এমন মন্তব্যও এসেছে অনেকের কাছ থেকে।
এই সিদ্ধান্ত কি তাঁর ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ইতি টানার ইঙ্গিত? নাকি শুধুই সাময়িক বিরতি? তামিম এ বিষয়ে কিছুই বলেননি। তবে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর পুনর্বাসন সঠিকভাবে এগোলে এবং শারীরিক অবস্থা সুস্থ থাকলে তিনি ভবিষ্যতে আবার মাঠে ফেরার চেষ্টা করতে পারেন। তবে সেই পথটি সহজ নয় এবং সময়সাপেক্ষ।
Leave a comment