দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। হাটবাজার, সড়ক, কালভার্ট, ড্রেন এবং সেতু নির্মাণে সংস্থাটি দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। তবে এবার নিজেদের নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে ড্রেন ও কালভার্ট নির্মাণ শিখতে বিদেশ যাওয়ার জন্য বৈদেশিক প্রশিক্ষণের নামে অগ্রিম অর্থ বরাদ্দের আবেদন করেছে এলজিইডি।
সম্প্রতি মানিকগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৭৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণের জন্য অগ্রিম ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা সরকারি অর্থায়নে উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিদেশ ভ্রমণে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার পরিপন্থী। বিষয়টি বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং পরিকল্পনা কমিশনও প্রস্তাবটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে।
প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, এই প্রকল্প মানিকগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও শিল্পসমৃদ্ধ এলাকার নেটওয়ার্ক গঠনের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সহজ যোগাযোগ, শিল্পজাত পণ্যের বাজারজাতকরণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এর আওতায় ৪২৭ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পাকাকরণ, জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন নির্মাণ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত সুবিধা বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
তবে প্রকল্প বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিদেশ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এলজিইডি উচ্চমূল্যের গাড়ি কেনা, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ, আপ্যায়ন, পরামর্শক নিয়োগসহ নানা খাতে ব্যাপক ব্যয়ের প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে ২০টি যানবাহন কেনার জন্য প্রায় ৫ কোটি ৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে, যদিও পর্যাপ্ত চালক সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়নি।
এ ছাড়া, পরামর্শকের জন্য ৩ কোটি ৮৪ লাখ, প্রচার বিজ্ঞাপনে ৭৮ লাখ, অভ্যন্তরীণ ভ্রমণে ৬০ লাখ, আপ্যায়নে ২০ লাখ, গ্যাস ও জ্বালানি খাতে ১ কোটি ১০ লাখ, আউটসোর্সিং স্টাফের জন্য ৭ কোটি, পরিবেশগত খরচে ৪ কোটি ২৭ লাখ এবং পুনর্বাসন খাতে ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান মো. ছায়েদুজ্জামান জানিয়েছেন, সরকারি অর্থায়নে বিদেশ প্রশিক্ষণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় এটি অনুমোদন দেওয়া সম্ভব নয়। পাশাপাশি প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় খাতগুলো পুনর্মূল্যায়ন করে অযৌক্তিক ব্যয় প্রস্তাব বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
এলজিইডির এই প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় আলোচনার মুখে পড়তে যাচ্ছে। বিদেশ প্রশিক্ষণসহ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় প্রস্তাব বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
Leave a comment