ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আজীবন সদস্যপদ বাতিল করা হয়েছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) রাতে অনুষ্ঠিত ডাকসুর দ্বিতীয় সাধারণ সভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সভার পর ডাকসুর ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) সাদিক কায়েম সাংবাদিকদের জানান,“২০১৯ সালে ডাকসুর গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছিল। সেটি ছিল সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ সিদ্ধান্ত। সাধারণ সভায় সেই বিতর্কিত রেজুলেশন বাতিল করা হয়েছে।”
ডাকসুর নতুন নেতৃত্ব জানিয়েছে, সংগঠনের গঠনতন্ত্রে ‘আজীবন সদস্যপদ’ নামের কোনো ধারা নেই। তাই ২০১৯ সালের সিদ্ধান্তটি আইনি ও সাংগঠনিকভাবে অবৈধ। নতুন কমিটি মনে করছে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ডাকসুর গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও নিরপেক্ষতা পুনঃপ্রতিষ্ঠা পেল।
২০১৯ সালের বিতর্কিত ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রাধান্য ও বিরোধী প্রার্থীদের অভিযোগের মধ্য দিয়ে একটি আংশিক সংসদ গঠিত হয়। সেই সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন গোলাম রাব্বানী এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন নুরুল হক নুর।
একই বছরের ৩০ মে ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায়, তৎকালীন জিএস গোলাম রাব্বানীর প্রস্তাবে শেখ হাসিনাকে ‘আজীবন সদস্য’ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ওই সভার বিবৃতিতে রাব্বানীর স্বাক্ষর থাকলেও ভিপি নুরুল হক নুরের স্বাক্ষর ছিল না।
প্রস্তাবটির বিরোধিতা করেছিলেন তৎকালীন ভিপি নুরুল হক নুর ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন। তারা অভিযোগ করেন, এটি ছিল একটি ‘দলীয় প্রভাবিত ও একতরফা সিদ্ধান্ত’, যা ডাকসুর নিরপেক্ষতার পরিপন্থী।
তবে সে সময় ডাকসুর সভাপতি পদাধিকারবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান এই রেজুলেশন অনুমোদন করেন এবং পরদিনই ডাকসুর অফিসিয়াল প্যাডে প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়, যেখানে শেখ হাসিনাকে আজীবন সদস্য ঘোষণা করা হয়। ডাকসুর নতুন ভিপি সাদিক কায়েম বলেন,“ডাকসু বাংলাদেশের ছাত্ররাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু। এটি কোনো রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয়। আমরা গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে ডাকসুর কার্যক্রম যাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিচালিত হয়, সে বিষয়ে একটি নতুন নীতিমালা তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এই সিদ্ধান্ত ডাকসুর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ চরিত্রকে পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
ডাকসুর এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেক শিক্ষার্থী পদক্ষেপটিকে ‘গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার’ হিসেবে আখ্যা দিলেও, কিছু শিক্ষার্থী বলছেন—এটি ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’র বহিঃপ্রকাশ’ হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি। তবে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ডাকসুর সিদ্ধান্তটি পর্যালোচনা করে প্রয়োজন হলে আইনি মতামত নেওয়া হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত ছাত্ররাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ কেউ এটিকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠা হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ আশঙ্কা করছেন যে, এটি রাজনৈতিক বিভাজনও সৃষ্টি করতে পারে।
Leave a comment