সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত জেবুন নেসা মসজিদটি টাইম ম্যাগাজিনের ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫’ তালিকায় স্থান পেয়েছে। এই মসজিদটি তার অনন্য স্থাপত্যশৈলী, পরিবেশবান্ধব নকশা এবং শ্রমিকদের জন্য প্রশান্তির স্থান হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে।
বিশ্বের প্রভাবশালী সাময়িকী টাইম ম্যাগাজিন প্রতি বছর বিশ্বের ১০০টি উল্লেখযোগ্য স্থানের তালিকা প্রকাশ করে, যা ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস’ নামে পরিচিত। ২০২৫ সালের এই তালিকায় প্রথমবারের মতো স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের সাভারের আশুলিয়ায় অবস্থিত জেবুন নেসা মসজিদ।
জেবুন নেসা মসজিদটি নির্মাণ করেছেন স্থানীয় একটি বৃহৎ তৈরি পোশাক কারখানার মালিক, যিনি তার প্রয়াত মায়ের স্মরণে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদটি তার মালিকানাধীন ফ্যাশন ফোরাম লিমিটেড কারখানার অভ্যন্তরে অবস্থিত, যা প্রায় ৬,৫০০ পোশাক শ্রমিকের জন্য একটি প্রশান্তির আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে।
মসজিদটির নকশা করেছেন ঢাকার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান স্টুডিও মরফোজেনেসিস-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সাইকা ইকবাল মেঘনা। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করেছেন এবং বর্তমানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন।
মসজিদটি চতুর্ভুজ আকৃতির, যার কেন্দ্রে রয়েছে একটি বৃহদায়তন গম্বুজ। গোলাপি রঙের ইট দিয়ে নির্মিত এই মসজিদটি তার সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলীর জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মসজিদের দেয়ালে রয়েছে অসংখ্য ছিদ্র, যা দিয়ে প্রাকৃতিক আলো ও বাতাস প্রবেশ করে, ফলে অভ্যন্তরে সবসময় শীতল পরিবেশ বজায় থাকে। এই নকশার ফলে মসজিদে বৈদ্যুতিক পাখা বা এসির প্রয়োজন হয় না।
মসজিদের সামনে রয়েছে কাচে ঘেরা একটি সরু লেক, যা বাতাসকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল করে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও, মসজিদের পূর্বপাশে একটি ইস্পাতের সিঁড়ি রয়েছে, যা উপরে উঠে অর্ধচাঁদ আকৃতির মেজানাইন ফ্লোরে পৌঁছায়। এই ফ্লোরটি নারীদের নামাজের জন্য সংরক্ষিত, যা থেকে সরাসরি নিচতলার মুসল্লিদের দেখা যায়।
টাইম ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “বাংলাদেশের স্থপতিরা দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক মসজিদ ডিজাইন করে আসছেন, কিন্তু ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত এই গোলাপি রঙের স্থাপনাটি তার শিল্প পরিবেশের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় চিত্র তুলে ধরে।”
মসজিদের স্থপতি সাইকা ইকবাল মেঘনা টাইম ম্যাগাজিনকে বলেন, “একজন নারীর নামে মসজিদের নামকরণ করার ধারণাটি আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে।এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির জন্য একটি গর্বের বিষয়, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।
জেবুন নেসা মসজিদ তার অনন্য স্থাপত্যশৈলী, পরিবেশবান্ধব নকশা এবং শ্রমিকদের জন্য প্রশান্তির স্থান হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। টাইম ম্যাগাজিনের ‘দ্য ওয়ার্ল্ডস গ্রেটেস্ট প্লেসেস অব ২০২৫’ তালিকায় স্থান পাওয়া এই মসজিদটি বাংলাদেশের স্থাপত্যশৈলী ও সংস্কৃতির জন্য একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক।
Leave a comment