চব্বিশের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা-সংক্রান্ত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দীর্ঘ তদন্ত, ব্যাপক সাক্ষ্যগ্রহণ এবং প্রসিকিউশন–ডিফেন্সের বিস্তৃত যুক্তিতর্ক শেষে সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এই ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে।
ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ রায় প্রদান করেন। মামলার তৃতীয় আসামি সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল পৃথক সিদ্ধান্ত দেবে বলে জানিয়েছে।
প্রসিকিউশন তিন আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি গুরুতর অভিযোগ আনে। অভিযোগগুলো হলো—
• গণহত্যায় উসকানি প্রদান
• মারণাস্ত্র ব্যবহার
• আবু সাঈদ হত্যা
• চানখারপুলে গণহত্যা
• আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো
এ অভিযোগসমূহ প্রমাণে জমা দেওয়া হয় ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার বিশদ প্রতিবেদন। এর মধ্যে—
• ২,০১৮ পৃষ্ঠা ছিল তথ্যসূত্র
• ৪,০০৫ পৃষ্ঠা দালিলিক প্রমাণ ও জব্দতালিকা
• ২,৭২৪ পৃষ্ঠায় শহীদদের তালিকা ও বিস্তারিত বিবরণ
ট্রাইব্যুনালে মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা সম্পন্ন হয়। এরপর ৯ কার্যদিন ধরে চলে প্রসিকিউশন, স্টেট ডিফেন্স এবং আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক ও পাল্টা যুক্তিখণ্ডন।
২৩ অক্টোবর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান রাষ্ট্রপক্ষের সমাপনী বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স কাউন্সেল আমির হোসেন যুক্তিখণ্ডন করেন। যুক্তি উপস্থাপন শেষে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ১৭ নভেম্বর দিন ধার্য করা হয়।
মামলার প্রধান দু’জন আসামি—শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান—বর্তমানে পলাতক। তবে সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন গ্রেফতারের পর এক বছর ধরে কারাগারে আছেন।
মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক সাক্ষ্য দেন। তার সাক্ষ্যেই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ঘটনাপ্রবাহ, নির্দেশনা এবং কথিত পরিকল্পনার বিবরণ উঠে আসে। এজন্য প্রসিকিউশন তার শাস্তির বিষয়টি ট্রাইব্যুনালের বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেয়।
যদিও তার আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ মামুনের সম্পূর্ণ খালাস দাবি করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন যুক্তি দেন, শেখ হাসিনা ও কামালও খালাস পাওয়ার যোগ্য।
দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর আদালত তার সিদ্ধান্তে উল্লেখ করে, উপস্থাপিত সাক্ষ্য-প্রমাণ এবং জেরা পর্যালোচনায় অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা ছিল না।
তৃতীয় আসামি মামুনের বিষয়ে আদালত পরে বিস্তারিত নির্দেশনা দেবে বলে জানিয়েছে।এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা যাবে। অপরাধ প্রমাণিত আসামিরা পলাতক থাকায়, তাদের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারিসহ আন্তর্জাতিক আইনি যোগাযোগের প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হতে পারে।
Leave a comment