জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় গ্রাহকের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। শাখার ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা স্বীকার করেছেন যে, তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের ব্যাংক হিসাব থেকে কৌশলে ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের দাবি, আত্মসাতের পরিমাণ দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রোববার সন্ধ্যায় গ্রাহকেরা ব্যাংকটির ওই এজেন্ট শাখার সামনে বিক্ষোভ করেন এবং কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করেন। রাত নয়টার দিকে শাখাটিতে গিয়ে দেখা যায়, উদ্বিগ্ন গ্রাহকদের উপচে পড়া ভিড়। তাঁরা নিজেদের হিসাব থেকে টাকা উধাও হওয়ার বিষয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ব্যাখ্যা চান।
আক্কেলপুর দারুল কোরআন মাদ্রাসার হিসাব থেকে টাকা গায়েব হওয়ার পর এই অর্থ আত্মসাতের ঘটনা সামনে আসে। মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি ফিরোজ আহমদ জানান, তাঁদের মাদ্রাসার হিসাবে ৩৯ লাখ টাকা ছিল। গত বৃহস্পতিবার তাঁরা ১৩ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংক থেকে কোনো লেনদেনের খুদে বার্তা না পাওয়ায় সন্দেহ হয়।
রোববার তাঁরা ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখায় গিয়ে হিসাব বিবরণী নেন এবং দেখতে পান, তাঁদের হিসাবে মাত্র ১৭ হাজার ২৯৯ টাকা রয়েছে! এরপর এজেন্ট ব্যাংকিং শাখায় এসে ব্যবস্থাপক ও ক্যাশিয়ারের সঙ্গে বসলে, ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা স্বীকার করেন যে, তিনি বিভিন্ন গ্রাহকের হিসাব থেকে কৌশলে টাকা উত্তোলন করেছেন।
আক্কেলপুর পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল মোমিন জানান, তাঁর হিসাব থেকেও তিন লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
অভিযুক্ত মাসুদ রানা বলেন, আত্মসাৎ করা টাকার একটি অংশ দিয়ে তিনি গ্রামের বাড়ি পাঁচবিবির রহমতপুরে জমি কিনেছেন এবং কিছু টাকা বন্ধক রেখেছেন।
এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার ব্যবস্থাপক রিওয়ানা ফারজানা বলেন, ‘ক্যাশিয়ার মাসুদ রানা এভাবে টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা আগে জানতাম না। আজ কয়েকজন গ্রাহক খোঁজ নিতে আসার পর ঘটনাটি জানতে পারি।’
গ্রাহকেরা ঘটনাটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মনজুরুল আলমকে জানান। সন্ধ্যার পর পুলিশ শাখাটিতে এসে তদন্ত শুরু করে। ইউএনও মনজুরুল আলম বলেন, ‘আমি প্রথমে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা আত্মসাতের কথা শুনেছি। এখন শুনছি, এই অঙ্ক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।’
ইসলামী ব্যাংকের জয়পুরহাট শাখার ব্যবস্থাপক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমরা জেনেছি। আগামীকাল (সোমবার) আমরা সেখানে গিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করব। আত্মসাতের পুরো অঙ্ক নির্ধারণ করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ইউএনও মনজুরুল আলম জানিয়েছেন, এ ঘটনায় দ্রুতই মামলা করা হবে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে গ্রাহকদের দাবি, দ্রুত তদন্ত করে তাঁদের হারানো টাকা ফেরত দিতে হবে।
Leave a comment