বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৮৫ সালের ১১ মে একটি হৃদয়বিদারক ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। সেদিন ছিল পবিত্র কুরআনের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অন্যতম একটি অধ্যায়—যা ‘কুরআন দিবস’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। তবে এ দিনের স্মৃতি শুধু ধর্মীয় অনুভূতির জাগরণে নয়, বরং তা রক্তে রঞ্জিত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাটিতে। কুরআনের অবমাননার প্রতিবাদে আয়োজিত একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত আটজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। আহত হন আরও অনেকে।
ঘটনার পটভূমি গড়ে ওঠে যখন দেশের কিছু প্রকাশনায় কুরআনের আয়াতের অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষোভ তৈরি হয়। ইসলামী সংগঠনগুলো বিশেষভাবে সরব হয়, বিশেষ করে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা। তাঁরা কুরআনের অবমাননার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে ‘কুরআন দিবস’ পালনের ডাক দেন।
১১ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেন। তাঁরা চাচ্ছিলেন কুরআনের মর্যাদা রক্ষায় একটি সুস্পষ্ট বার্তা দিতে। কিন্তু পরিস্থিতি হঠাৎই ভয়াবহ মোড় নেয়। মিছিল নিয়ন্ত্রণে আনার অজুহাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালায়। মুহূর্তেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক, ভাঙে জনতার সারি।
গুলিতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন নিহত হন, বাকিরা পরে হাসপাতালে মারা যান। আহত হন অনেক বিক্ষোভকারী, যাদের অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। শহরের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে রক্ত, শোক আর ক্রন্দন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে সারা দেশে শুরু হয় নিন্দা ও ক্ষোভের ঝড়। ইসলামী সংগঠনগুলো নিহতদের শহীদ ঘোষণা করে তাঁদের স্মরণে প্রতিবছর ১১ মে ‘কুরআন দিবস’ পালন করে আসছে। এই দিনটি আজও স্মরণ করিয়ে দেয়, ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবহেলার কী ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সেই রক্তাক্ত দিন আজ ইতিহাসে এক করুণ ও গৌরবময় অধ্যায়। তা কেবল এক ধর্মীয় আন্দোলনেরই প্রতিচ্ছবি নয়, বরং মানুষের বিশ্বাস, সম্মান ও আত্মত্যাগের এক অনন্য নিদর্শন।
Leave a comment