কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলায় আতিকুল ইসলাম নামে দুই বছরের এক শিশুকে গলা টিপে হত্যার পর বালতির পানিতে চুবিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে, ভাবী খাদিজা আক্তারের বিরুদ্ধে। ঘটনার প্রায় এক বছর পর কল রেকর্ডের সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উন্মোচিত হয়। মঙ্গলবার (২৭ মে) আদালতের নির্দেশে শিশুটির মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে পিবিআই। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের আলিকামোড়া গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে নিহত আতিকুল ইসলাম, তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ছিল সবার ছোট।
স্থানীয় সূত্র ও মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ঘটনার দিন ২০২৪ সালের ১৮ মে, আতিক ঘরে পানি ফেলায় ক্ষিপ্ত হয়ে ভাবী খাদিজা আক্তার তাকে গলা টিপে হত্যা করেন। পরে মরদেহ বাথরুমের বালতির পানিতে চুবিয়ে রেখে তিনি অপমৃত্যুর নাটক সাজান। পরিবারের সবাই শিশুটির মৃত্যু পানিতে ডুবে হয়েছে বলে ধরে নিয়ে দাফন সম্পন্ন করে।
তবে শিশুটির মা হাছিনা আক্তার প্রথম থেকেই সন্তানের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি কিছুতেই বালতির পানিতে পড়ে মৃত্যুর কথা মেনে নিতে পারছিলেন না। চার মাস পর প্রবাসে থাকা বড় ছেলে হানিফের সঙ্গে ভাবী খাদিজার ফোনালাপের একটি রেকর্ডে হত্যার বিষয়টি প্রকাশ পায়। কল রেকর্ডে খাদিজা নিজের মুখেই হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর আদালতে মামলা দায়ের করেন হাছিনা আক্তার।
মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কুমিল্লার পরিদর্শক মো. দিদারুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে মরদেহ উত্তোলন করা হয়। এ সময় চান্দিনা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়সাল আল নুর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
পিবিআই পরিদর্শক দিদারুল ফেরদৌস বলেন, “ সঠিক তদন্তের স্বার্থে এবং মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।”
নিহত শিশুটির মা হাছিনা আক্তার বলেন, “আমার ছোট ছেলে আতিক খুব দুষ্টু ছিল। সেদিন আমি পাশের বাড়িতে গেলে সে ঘরে পানি ফেলে। এই ঘটনায় আমার পুত্রবধূ তাকে গলা টিপে হত্যা করে। বাড়ি ফিরে ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে দেখি সে বালতির পানিতে মাথা নিচু করে পড়ে আছে। আমি তখনই বলেছিলাম, ‘আমার ছেলেকে মেরে ফেলা হয়েছে।’ কিন্তু কেউ বিশ্বাস করেনি।”
হাছিনা আক্তার আরও বলেন, “১৫ দিন পর খাদিজা তার বাবার বাড়ি চলে যায়। পরে সেখানে থেকে আমার বড় ছেলে হানিফের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় হত্যার কথা স্বীকার করে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিশুটির গলায় দাগ ছিল। তবে সবাই সেটিকে বালতির কিনারায় লেগে যাওয়া আঘাত বলে মনে করে গুরুত্ব দেয়নি। কল রেকর্ড প্রকাশ হওয়ার পর সবার ভুল ভেঙে যায়। এলাকাবাসীর দাবি, এ ঘটনার সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার হওয়া উচিত।
যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও অভিযুক্ত খাদিজা আক্তারকে পাওয়া যায়নি। তদন্তের স্বার্থে কল রেকর্ডের ফরেনসিক বিশ্লেষণও করা হবে বলে পিবিআই জানিয়েছে ।
তথ্যসূত্র: প্রথম আলো
Leave a comment