একটু ত্রাণের আশায় হাড় জিরজিরে শরীর নিয়ে দক্ষিণ গাজার পথে হেঁটে এসেছিল ছোট্ট শিশু আমির। বয়স মাত্র আট কিংবা নয়। ছেঁড়া জামা গায়ে, পায়ে কিছুই ছিল না। সূর্যদগ্ধ রাস্তায় ১২ কিলোমিটার হেঁটে সে পৌঁছেছিল ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। কিছু চাল আর ডাল পেয়ে মুখে হাত রেখে এক বিদেশিকে চুমু খেয়ে বলেছিল ইংরেজিতে—“Thank you”। সেই কণ্ঠস্বরে তখন জীবনের জন্য আশা ছিল।
কিন্তু ওই মুহূর্তেই শুরু হয় গুলির শব্দ। ইসরায়েলি বাহিনী নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালায় কাঁদানে গ্যাস, মরিচের গুঁড়া, স্টান গ্রেনেড, এমনকি তাজা গুলিও। দৌড়াতে শুরু করে শিশু আমির। কিন্তু তার ক্ষীণ পা আর চলতে পারেনি। গুলির শব্দে থেমে যায় তার প্রাণ।
সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা অন্থনি আগুইলার, যিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিক টাকার কার্লসনের কাছে বলেন, “আমিরকে দেখে আমার নিজের ছেলের কথা মনে পড়ল। সে শুধু একটা ধন্যবাদ দিয়েছিল। তারপরই তাকে মেরে ফেলা হলো।”
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ‘মিডল ইস্ট মনিটর’ ও ‘আল জাজিরা’র বরাতে জানা যায়- ২ মার্চ থেকে গাজায় পুরোপুরি ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। খাদ্য, পানি, ওষুধ—সবকিছুর প্রবাহ থমকে গেছে। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, “গাজা এখন একটি মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষের মুখে পড়েছে।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা Gaza Humanitarian Foundation (GHF) গাজায় কাজ শুরু করার পর থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে ১০০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতির প্রতিবাদে আগুইলার GHF থেকে পদত্যাগ করেন।
জাতিসংঘ-সমর্থিত Integrated Food Security Phase Classification (IPC) এর তথ্য অনুযায়ী, গাজায় প্রতি তিন শিশুর মধ্যে একজন চরম অপুষ্টিতে ভুগছে। ইতোমধ্যে অনাহারে মারা গেছে প্রায় ১৫০ শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক।
গাজার মানুষ এই ত্রাণ সংগ্রহের বিপজ্জনক পরিস্থিতিকে “স্কুইড গেম”-এর সাথে তুলনা করেছেন। যেখানে খাদ্য পাওয়া মানেই জীবন বাঁচার সুযোগ, আবার একইসঙ্গে মৃত্যুর হাতছানি। ত্রাণের জন্য অপেক্ষা এখন শুধুই ভয়, আতঙ্ক আর শেষ আশার নাম।
সূত্র: মিডল ইস্ট মনিটর, আল জাজিরা, UNRWA, IPC
Leave a comment