অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা ও স্থল অভিযানে আরও অন্তত ৬৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ছিলেন মানবিক সহায়তা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। একই সঙ্গে খাদ্য সংকট ও অনাহারে প্রাণ হারিয়েছেন আরও আটজন, যাদের মধ্যে দুইজন শিশু রয়েছে। রোববার (২৪ আগস্ট) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য প্রকাশ করেছে।
চিকিৎসা সূত্র আল জাজিরাকে জানিয়েছে, শনিবার (২৩ আগস্ট) একদিনেই গাজাজুড়ে কমপক্ষে ৬৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হামলা চালানো হয়েছে রাজধানী গাজা সিটির ভেতরে, যেখানে ইসরায়েলি সেনারা ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শহর দখল ও প্রায় এক মিলিয়ন মানুষকে জোরপূর্বক উৎখাতের কৌশলের অংশ হিসেবেই এই অভিযান চলছে। আল জাজিরা অ্যারাবিক প্রকাশিত একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইসরায়েলি ট্যাংক গাজা সিটির সাবরা এলাকায় প্রবেশ করছে।
সাবরার পাশেই অবস্থিত জায়তুন পাড়া, যেখানে গত এক সপ্তাহ ধরে টানা হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। শনিবারের সর্বশেষ বিমান হামলায় সাবরায় একটি শিশু নিহত হয় বলে গাজার আল-আহলি হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এর আগে শনিবার সকালেই দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের উত্তর-পশ্চিমে আসদা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাবুতে গোলাবর্ষণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। চিকিৎসা সূত্রে নিশ্চিত হওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ ঘটনায় ছয় শিশুসহ অন্তত ১৬ জন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সতর্কবার্তা সত্ত্বেও গাজায় মানবিক সংকট ক্রমেই ভয়াবহ হয়ে উঠছে। ওষুধ, খাদ্য ও জ্বালানির অভাবে হাসপাতালগুলোতে স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। হাজারো মানুষ প্রতিদিন মানবিক সহায়তার লাইনে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু বোমা হামলার ঝুঁকি তাদের জীবনকে আরও বিপন্ন করে তুলছে।
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজা সিটি ও দক্ষিণাঞ্চলে একযোগে অভিযান পরিচালনা ইসরায়েলের পরিকল্পিত দখল কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। সাবরায় ট্যাংকের প্রবেশ এবং খান ইউনিসে বাস্তুচ্যুতদের ওপর হামলা প্রমাণ করে, এই অভিযান মূলত ফিলিস্তিনিদের আরও বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল করার উদ্দেশ্যে চালানো হচ্ছে।
গাজায় প্রতিদিনের হামলা ও অবরোধ শুধু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে না, বরং খাদ্যাভাব ও অনাহারের মতো নীরব মৃত্যুকেও বাড়িয়ে তুলছে। একদিকে বিমান হামলা, অন্যদিকে মানবিক সহায়তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ফিলিস্তিনি জনগণ এখন দ্বিমুখী সংকটে পড়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই মানবিক বিপর্যয় থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
Leave a comment