ফিলিস্তিনের গাজামুখী ত্রাণবাহী নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ভূমধ্যসাগরে ইসরায়েলি সেনাদের আক্রমণের মুখে পড়ে। বন্দুক তাক করে সেনারা নৌযানগুলো থামিয়ে দেয় এবং প্রায় সব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের আটক করে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ পরিবেশ আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গও। এ ঘটনায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে এবং বিশ্বজুড়ে নিন্দা-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফ্লোটিলা কর্তৃপক্ষ জানায়, ৪২টি নৌযানের মধ্যে মাত্র একটি তখনও গাজার পথে অগ্রসর হচ্ছিল। বাকি নৌযানগুলো আটক করে ইসরায়েল, যেখানে ৪৪টিরও বেশি দেশের অন্তত ৪৪৩ জন অধিকারকর্মী ছিলেন। নৌযানগুলোতে খাদ্য, ওষুধ, তাঁবু এবং অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী ছিল।
ফ্লোটিলার যাত্রা শুরু হয়েছিল স্পেন থেকে, পরে তিউনিসিয়া, ইতালি ও গ্রিস থেকেও আরও নৌযান যুক্ত হয়। উদ্দেশ্য ছিল প্রতীকীভাবে হলেও ইসরায়েলের অবরোধ ভেঙে গাজায় ত্রাণ পৌঁছানো। তবে উপকূল থেকে প্রায় ১২৯ কিলোমিটার দূরে নৌবহরটি ইসরায়েলি নৌবাহিনীর বাধার মুখে পড়ে। সেনারা একে একে নৌযানে ওঠে, জলকামান দিয়ে হামলা চালায় এবং যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়।
অধিকারকর্মী থুনবার্গকে আটক করার পর ফ্লোটিলা একটি আগেই ধারণ করা ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে তিনি অভিযোগ করেন, তাঁকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করা হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানায়, আটক ব্যক্তিরা নিরাপদে আছেন এবং উৎসব শেষে তাঁদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। তবে আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় অহিংস মানবিক তৎপরতায় হামলা চালানো সুস্পষ্টভাবে অবৈধ।
ইতিমধ্যেই ইতালি, তুরস্ক, আয়ারল্যান্ড, কলম্বিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বহু দেশে বিক্ষোভ হয়েছে। কলম্বিয়া ইসরায়েলের কূটনীতিকদের বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ইসরায়েলের পদক্ষেপকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলেছেন। জাতিসংঘও ঘটনাটিকে গাজায় অবৈধ অবরোধ আরও বিস্তৃত করার অভিযোগ হিসেবে দেখছে।
এর আগেও গাজাগামী নৌবহরে একাধিকবার হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ২০১০ সালে, যখন ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলায়’ হামলায় ১০ অধিকারকর্মী নিহত হন। এবারও আন্তর্জাতিক আদালতে বিষয়টি তোলা হবে বলে জানিয়েছেন ফ্লোটিলার সঙ্গে থাকা আইনজীবীরা।
গাজার অবরুদ্ধ উপত্যকায় যেখানে দুই বছরে ৬৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং খাদ্যের তীব্র সংকট চলছে, সেখানে এই হামলা বিশ্বজুড়ে মানবিক সংকটের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আরও তীব্র করে তুলেছে।

Leave a comment