জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গুলি করে ছাত্র-জনতাকে হত্যা মামলায় প্রত্যেক খুনির বিচার আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রোববার সাভারের আশুলিয়ায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, অতীতে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসিয়ে অনেককে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, যা আমরা বরাবরই প্রত্যাখ্যান করেছি। তাই今回は বিদেশি কনসাল্ট্যান্ট নিয়ে বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে যেন কেউ বলে উঠতে না পারে যে ‘ক্যাঙারু কোর্ট’ বসানো হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, “আমরা সবাই শহীদদের সঙ্গে ওয়াদা করেছি, প্রত্যেক খুনির বিচার হবে, কেউ বাদ যাবে না। তবে ন্যায়বিচার করতে হলে সময় দিতে হবে, তাড়াহুড়ো করলে অন্যায়-অবিচার হতে পারে। কেউ যেন বলতে না পারে যে বিচার জোরপূর্বক চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চারটি বড় মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, ২৭টি মামলার তদন্ত চলছে এবং ১৮টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
শফিকুল আলম বলেন, “বাংলাদেশ থেকে রাজতন্ত্রের ইতি টানতে জুলাই যোদ্ধারা শহীদ হয়েছেন। তারা ভোটের অধিকার ও মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করেছেন। আমরা সেই গণতান্ত্রিক দেশ গড়ার লক্ষ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি।” তিনি আগামী নির্বাচনে সবাইকে ভোট দিতে আহ্বান জানান এবং আশাবাদ ব্যক্ত করেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ, স্বচ্ছ ও উৎসবমুখর।
আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিবির সভাপতি আবু সাদেক কায়েম বলেন, “এক বছর পরও জুলাই বিপ্লবের প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। শহীদদের আকাঙ্ক্ষা ছিল বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়া, কিন্তু বিচার প্রক্রিয়া ধীরগতির। শহীদ পরিবারের পূর্ণাঙ্গ তালিকা হয়নি, পুনর্বাসন ও যথাযথ সম্মান দেওয়া হয়নি, যা রাষ্ট্রের জন্য লজ্জাজনক।” তিনি খুনি হাসিনার সহযোগীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, জুলাই বিপ্লব ২০২৪-এর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী—ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শাকিল হোসেন পারভেজ ও ইলেকট্রিক অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের আহনাফ আবির আশরাফুল্লাহ—জুলাই বিপ্লবে শহীদ হন। তাদের স্মরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথে চত্বর ও লাইব্রেরি উদ্বোধন করা হয় এবং বৃক্ষরোপণ করা হয়। এছাড়াও পক্ষকালব্যাপী শহীদ ও আহতদের স্মরণে আলোচনা, দোয়া, কোরআন বিতরণ, সেমিনার, বিতর্ক ও অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফজলুর রহমান ও সদস্য মো. মতিউর রহমান আকন্দ।
জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও শহীদদের স্মরণে এই কর্মসূচি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ন্যায়বিচারের প্রয়োজনীয়তা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠার প্রতীক হিসেবে গুরুত্ব বহন করে।
Leave a comment