কুমিল্লায় মা-মেয়ে হত্যার ভয়াবহ রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন ও তার মা তাহমিনা বেগমকে হত্যা করেছে কবিরাজ মোবারক হোসেন। সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে গিয়ে ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ায় মা ও মেয়েকে হত্যা করে পালান তিনি।
পুলিশ সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে মোবারক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তিনি ওই এলাকার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে এবং বাবুস সালাম জামে মসজিদের খাদেম হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি কবিরাজি করতেন।
পুলিশ জানায়, নিহত তাহমিনা বেগম নিয়মিত স্থানীয় মসজিদের খতিব ইলিয়াস হুজুরের কাছে ঝাড়ফুঁক করতে যেতেন। সেখানেই তার পরিচয় হয় খাদেম মোবারকের সঙ্গে। এক মাস ধরে তাহমিনা বেগমের বাসায় যাতায়াত ছিল তার।
গত ৭ সেপ্টেম্বর তাহমিনা তার মেয়ে সুমাইয়ার ‘জিন তাড়ানোর’ জন্য মোবারককে বাসায় ডাকেন। প্রথমে সুমাইয়ার কক্ষে প্রবেশ করেন মোবারক। এ সময় তিনি সুমাইয়াকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। বিষয়টি টের পেয়ে মেয়ে ও মায়ের সঙ্গে তার বাগবিতণ্ডা হয়। নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে মোবারক প্রথমে তাহমিনা বেগমকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করেন। পরে সুমাইয়া আফরিনকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে বাসায় থাকা চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ নিয়ে পালিয়ে যান।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) নাজির আহমেদ খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ঘটনাস্থলের পাশের একটি স্কুলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মূল অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়। গ্রেপ্তারের পর মোবারক প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।
তিনি বলেন, “হত্যাকাণ্ডে আপাতত মোবারকের সম্পৃক্ততাই স্পষ্ট হয়েছে। তবে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। যদি অন্য কেউ জড়িত থাকে, তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।”
পুলিশ জানায়, হত্যার পর আত্মগোপনে চলে যান মোবারক। পরে সোমবার রাতে ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ট্রেনে রওনা হলে পুলিশের একটি বিশেষ দল অভিযান চালিয়ে বাগিচাগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধারের পর কুমিল্লা নগরীতে নেমে আসে শোকের ছায়া। প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা ঘটনার নৃশংসতায় হতবাক। স্থানীয়রা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
সোমবার ভোরে কুমিল্লা নগরীর কালিয়াজুড়ি এলাকার ভাড়া বাসা থেকে মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতরা হলেন— সুজানগর এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের স্ত্রী তাহমিনা বেগম এবং তার মেয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া আফরিন। ঘটনার পর নিহত তাহমিনার বড় ছেলে তাজুল ইসলাম ফয়সাল অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সাইফুল মালিক, কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. মহিনুল ইসলাম, জেলা ডিবির ওসি মো. আব্দুল্লাহ, ওসি (তদন্ত) মো. মিজানুর রহমানসহ জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা। পুলিশের দাবি, এ ঘটনা একটি সুপরিকল্পিত অপরাধ নয়; বরং ধর্ষণের চেষ্টার মুহূর্তে ধরা পড়ায় তাৎক্ষণিকভাবে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড।
Leave a comment