কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার জের ধরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে ভারত। আজ নয়াদিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তাবিষয়ক কমিটির জরুরি বৈঠকে নেওয়া হয়েছে পাঁচটি তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। হামলার দায় সরাসরি পাকিস্তানের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে ভারত।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি হলো—ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিদ্যমান সিন্ধু পানি চুক্তি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা। এই আন্তর্জাতিক চুক্তির ফলে পাকিস্তান সিন্ধু ও আশপাশের ছয়টি নদী থেকে যে পরিমাণ পানি পেত, সেটি এখন বন্ধ থাকবে। ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় হওয়া এই চুক্তি এত দিন টিকে থাকলেও, এই প্রথমবারের মতো ভারত একে স্থগিত করল।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ হিসেবে ভারত আটারি-ওয়াঘা সীমান্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কাল থেকেই কার্যকর হবে এই সীমান্ত বন্ধের আদেশ। এই সীমান্ত দিয়ে যাঁরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের সবাইকে আগামী ১ মে’র মধ্যে দেশত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত, দিল্লিতে নিযুক্ত পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ইসলামাবাদে ভারতীয় হাই কমিশনের সামরিক কর্মকর্তাদেরও দেশে ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
চতুর্থ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দুই দেশের হাইকমিশনে কর্মরত কর্মকর্তা সংখ্যা কমিয়ে ৩০-এ নামিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা বর্তমানে ৫৫ জন করে।
পঞ্চম ও শেষ পদক্ষেপটি হলো, সার্ক ভিসা বাতিল করে সব পাকিস্তানির জন্য ভারতে প্রবেশ সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন, তাঁদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল পেহেলগামের বৈসরণ উপত্যকায় এই হামলার ঘটনা ঘটে। পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই এলাকাকে ‘ভারতের সুইজারল্যান্ড’ বলেও বিবেচনা করা হয়। ভারত সরকার এটিকে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর অঞ্চলের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
হামলায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে সম্ভাব্য সব কৌশল গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পাঁচ দফা পদক্ষেপ শুধু কূটনৈতিক বার্তা নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে বড় একটি পালাবদলের ইঙ্গিত।
Leave a comment