মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আটজন বাংলাদেশি প্রবাসী। নিহতদের মধ্যে সাতজনের বাড়ি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার সারিকাইত ইউনিয়নে। বুধবার (৮ অক্টোবর) স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে দুকুম সিদরা এলাকায় এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহতদের সবাই মাছ ধরার কাজ করতেন। সেদিন সকালে সাগরে মাছ ধরার পর ফেরার পথে তারা দুর্ঘটনার শিকার হন। তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারটি বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাছবাহী ট্রাকের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের তীব্রতায় গাড়িটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং ঘটনাস্থলেই ১০ জনের মৃত্যু হয়, যাদের মধ্যে আটজন বাংলাদেশি নাগরিক।
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহতদের মধ্যে সাতজনই সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি বলেন, “নিহতরা সবাই সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে তাদের বহনকারী গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। ওই গাড়িতে মোট ১১ জন ছিলেন, যার মধ্যে ১০ জন ঘটনাস্থলেই মারা যান। সাতজনের বাড়ি সন্দ্বীপে।”
স্থানীয় প্রবাসী সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, তাদের মধ্যে রয়েছেন আমিন সওদাগর, আরজু, রকি, বাবলু, শাহাবউদ্দিন, জুয়েল, রনি এবং রাউজানের আলাউদ্দিন।
দুকুমে অবস্থানরত সন্দ্বীপের প্রবাসী সজীব চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, “নিহতরা প্রতিদিনের মতো সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। বিকেলে ফেরার সময় তাদের গাড়িটি বিপরীত দিক থেকে আসা একটি মাছবাহী ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে পড়ে। সংঘর্ষ এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, গাড়িটি মুহূর্তেই পিষ্ট হয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই সবাই প্রাণ হারান।”
তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু করে এবং পুলিশ পরে এসে নিহতদের মরদেহ দুকুম হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ওমানে থাকা বাংলাদেশি প্রবাসীদের মধ্যে গভীর শোক নেমে এসেছে। স্থানীয় প্রবাসী সংগঠন ও দূতাবাসের কর্মকর্তারা নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত ও মরদেহ দেশে পাঠানোর বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন।
মাস্কাটে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। নিহতদের পরিচয় নিশ্চিতের কাজ চলছে। প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে মরদেহগুলো দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে।”
সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জানান, “আমরা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। নিহতদের মরদেহ দ্রুত দেশে আনার জন্য প্রশাসনিক সহায়তা চাওয়া হয়েছে।”
বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওমান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে দূতাবাস প্রয়োজনীয় আইনগত ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, “এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা গভীর শোক প্রকাশ করছি। নিহতদের পরিবার যেন দ্রুত প্রবাসী কল্যাণ তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ পায়, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রবাসী কল্যাণ তহবিল ও প্রেরণকারী সংস্থাগুলোর আরও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
Leave a comment