ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বিশ্বজয়ী হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী (২৫)। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) সকালবেলা রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। রাতে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ডালপা গ্রামের নিজ বাড়ির মাদরাসা মাঠে জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
ত্বকীর জানাজায় হাজারো মানুষ অংশ নেন। সেখানে শোকের আবহে যখন চারদিক নিস্তব্ধ, তখন তার বাবা মাওলানা বদিউল আলমের বক্তব্যে অনেকেই চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি।
জানাজার আগে মাওলানা বদিউল আলম আবেগঘন কণ্ঠে বলেন,“আমার ছেলে হাসপাতালে আইসিইউতে যতটুকু প্রাণশক্তি ছিল, সেটুকু দিয়েই জিকির করেছে। আমি বেডের পাশে গিয়ে শুনতাম — সে কি করছে। আমি শুনেছি, তার প্রতিটি নিঃশ্বাসেই জিকিরের শব্দ ছিল।”
তিনি আরও বলেন,“আমার ছেলে ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী জীবনযাপন করেছে। সে যখন মারা যায়, আমার কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু আমি জানি আমার রবের সন্তুষ্টি কী। আমি দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে দোয়া করেছি। আমি নিজ হাতে তাকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে, কাঁধে তুলে কবরস্থানে নিয়ে গেছি, যেন তাকে জান্নাতে পৌঁছে দিতে পারি।”
তার এই বক্তব্যে উপস্থিত সবাই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকেই অশ্রুসজল চোখে বলেন — “এমন মৃত্যু সত্যিকারের সৌভাগ্য।”
হাফেজ সাইফুর রহমান ত্বকী কুমিল্লার মুরাদনগরের ডালপা গ্রামের সন্তান। জন্ম ২০০০ সালে। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার বাবা মাওলানা বদিউল আলম স্থানীয় একটি মাদরাসার শিক্ষক।
ত্বকী ছোটবেলা থেকেই ধর্মপ্রাণ ও মেধাবী ছিলেন। তিনি রাজধানীর মারকাযুত তাহফিজ মাদরাসা থেকে হিফজ সম্পন্ন করেন এবং একাধিকবার জাতীয় কোরআন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন।পরবর্তীতে জর্ডান, কুয়েত ও বাহরাইন-এ অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোরআন তেলাওয়াত প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এছাড়া এনটিভির “কোরআনের আলো” অনুষ্ঠানসহ দেশের বিভিন্ন টেলিভিশন প্রতিযোগিতায়ও তিনি ছিলেন নিয়মিত মুখ।মৃত্যুর আগে ত্বকী নারায়ণগঞ্জের একটি মাদরাসায় কিতাব বিভাগে পড়াশোনা করছিলেন।
স্বজনরা জানান, কয়েক দিন আগে তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। অবস্থার অবনতি হলে তাকে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ত্বকীর মৃত্যুতে শুধু পরিবার নয়, পুরো গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্থানীয় মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামপ্রেমীরা তাকে স্মরণ করছেন একজন “আলোকিত হাফেজ” হিসেবে।
একজন বিশ্বজয়ী কোরআন তেলাওয়াতকারীর এমন অকাল মৃত্যু যেন পুরো জাতির জন্যই এক বেদনার সংবাদ। তবে তার বাবার মতোই অনেকে বলছেন— “যে সন্তান জিকির করতে করতে মৃত্যু বরণ করে, সে প্রকৃত অর্থে বিজয়ী।”
Leave a comment