বাংলাদেশসহ বিশ্বের হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরে ঘরে আজ রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) পালিত হচ্ছে শুভ মহালয়া। এই পুণ্যলগ্নের মধ্য দিয়েই শুরু হলো সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। ভোরের আলো ফুটতেই শেষ হলো পিতৃপক্ষ, শুরু হলো দেবীপক্ষ। শ্রীশ্রী চণ্ডীপাঠের মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আবাহনকেই মহালয়া বলা হয়। পুরাণ মতে, এই চণ্ডীতেই রয়েছে মহিষাসুর বধের জন্য দেবী দুর্গার আবির্ভাবের বর্ণনা ও প্রশস্তি।
দেবীপক্ষের সূচনা ও ধর্মীয় তাৎপর্য-
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মহালয়ার দিনে দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। শিবের বরপ্রাপ্ত মহিষাসুরকে দেবতা বা মানুষ কেউই হত্যা করতে পারছিল না। তাই ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব ত্রয়ীর শক্তি থেকে জন্ম নেন মহামায়া দুর্গা। দেবতাদের দশ অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সিংহবাহিনী দেবী ৯ দিনব্যাপী যুদ্ধে মহিষাসুরকে পরাজিত করেন। এই দিন ভোর থেকেই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পূর্বপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেন। তাদের বিশ্বাস, পিতৃপক্ষে প্রয়াত আত্মারা মর্ত্যলোকে আসেন, আর মহালয়ার দিনে পূজা-অর্চনা ও অন্ন-জল উৎসর্গের মাধ্যমে তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করা হয়।
পূজামণ্ডপে উৎসবের আমেজ-
দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে ইতোমধ্যে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষের পথে। কাঠামো সাজানো শেষ, এখন চলছে রঙতুলির শেষ আঁচড়। মহালয়ার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপগুলোতেও চলছে ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজার আয়োজন। রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গন, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, জগন্নাথ হলসহ ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আজ ভোর থেকেই চণ্ডীপাঠ, ঘট স্থাপন ও বিশেষ পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একইভাবে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, রমনা কালী মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, জয়কালী মন্দিরসহ সারাদেশের মন্দির ও মণ্ডপে চলছে মহালয়া উৎসব।
পূজা শুরু ২৮ সেপ্টেম্বর-
আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু হবে দুর্গাপূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা। তবে মহালয়া থেকেই হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অনুভব করছেন দেবীর আগমনধ্বনি। শরতের আকাশ-বাতাসে এখন ভেসে আসছে দেবী বন্দনার সুর— “রূপং দেহি, জয়ং দেহি, যশো দেহি, দ্বিষো জহি”।
👉 মহালয়া শুধু দুর্গোৎসবের সূচনাই নয়, এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ভক্তি, আনন্দ ও ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ।
Leave a comment