দেশে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সচেতনতা বাড়াতে পারলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও কমে আসবে । তারা জানান, আক্রান্তদের অনেকেই জানেন না তার দেহে হেপাটাইটিস রয়েছে। এ কারণে উচিত সবার পরীক্ষা করা। যদি হেপাটাইটিস পজিটিভ আসে, তাহলে চিকিৎসা করাতে হবে। আর নেগেটিভ এলে টিকা নিয়ে সুরক্ষিত রাখতে হবে নিজেকে।
আজ ২৮ জুলাই, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস। ‘আসুন রুখে দিই’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে দেশে এবার দিবসটি পালন করা হবে।
এ উপলক্ষে সোমবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় র্যালি ও জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ ছাড়া দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জনসচেতনতামূলক নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
হেপাটাইটিস এ, বি, সি, ডি ও ই সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২৮ জুলাইকে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস ঘোষণা করে। সংস্থাটির জরিপের অন্যতম আটটি অফিশিয়াল পাবলিক হেলথের মধ্যে বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস একটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে আক্রান্তদের ১০ জনের মধ্যে ৯ জনই জানেন না তিনি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত। বিশ্বে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবছর প্রায় ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন লোক মারা যায়
লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ হেপাটোলজি সোসাইটির এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জন্ডিস নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ৭৬ শতাংশের হেপাটাইটিস ধরে পড়ে।
পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগের বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্টোএন্টারোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. এ বি এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘আগে দেশের প্রায় ৭ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত ছিল। মজার বিষয় হচ্ছে, দেশে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। এখন ৫ শতাংশের মতো মানুষের হেপাটাইটিস থাকতে পারে। যারা হাসপাতালে আসেন, তারা জটিল অবস্থায় আসেন। অধিকাংশই লিভার নষ্ট হওয়ার পর আসেন। আর তখন আমাদের কিছু করার থাকে না। তাই হেপাটাইটিস সম্পর্কে নিজের জানা, পরীক্ষা করা এবং অন্যদের জানানো, সচেতন ও পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে হবে। পরীক্ষায় পজিটিভ হলে চিকিৎসা নিতে হবে। নেগেটিভ এলে টিকা নিয়ে নিরাপদ হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ভাইরাসের মাধ্যমে লিভার ইনফেকশন হওয়াকে হেপাটাইটিস বলা হয়। এর চিকিৎসা করা না হলে লিভার শক্ত হয়ে যায়। এই অবস্থাকে সিরোসিস বলা হয়। আবার হেপাটাইটিসের কারণে লিভার ফেইলিউর ও লিভার ক্যানসার হয়ে রোগী মারা যান। সে জন্য আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকার টিকা দিচ্ছে। সব শিশুর টিকা নিতে হবে। টিকা কার্যকর আছে কি না, তা দেখতে হবে? মায়েদের মাধ্যমে শিশুদের এটা বেশি ছড়ায়। বিশেষ করে সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, হেপাটাইটিস, লিভার ক্যানসারের একটি প্রধান কারণ। বিশ্বে লিভার ক্যানসারের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’। হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে প্রতি ৩০ সেকেন্ডে একজন মারা যান।
বাংলাদেশে আসলে কী পরিমাণ মানুষ হেপাটাইটিসে আক্রান্ত তা নিয়ে জনসংখ্যাভিত্তিক নির্দিষ্ট কোনো জরিপ নেই বলে জানা যায়। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’তে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। এদিকে দেশের বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে, প্রতিবছর বাংলাদেশে ২০ হাজারের বেশি হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে ডা. এ বি এম শফিউল্লাহ বলেন, ‘হাসপাতাল বেইজ জরিপ থাকলেও জনসংখ্যার ওপর কোনো জরিপ নেই। আমি প্রথম জনগোষ্ঠীর ওপর একটি স্টাডি করেছিলাম। তখন ৩ শতাংশ আক্রান্ত পেয়েছিলাম। ২০০৮ সালে যখন বস্তিবাসীদের ওপর স্টাডি করি, তখন ৫ দশমিক ৪ শতাংশ পাই।’
যাদের হেপাটাইটিস বি আছে, তাদের একটু সাবধান থাকতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা যাতে বাইরের খাবার না খান। বিশেষ করে চর্বিজাতীয় খাবার যাতে না খান। বাইরের খাবার খেলে অনেক সময় হেপাটাইটিস ‘বি’র সঙ্গে হেপাটাইটিস ‘এ’ বা ‘ই’ আসতে পারে।
Leave a comment