মিয়ানমারে অবৈধভাবে পণ্য পাচারের একটি বড় প্রচেষ্টা নস্যাৎ করেছে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ছেঁড়াদ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় পরিচালিত বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ বাংলাদেশি সিমেন্ট ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যসহ ২২ জন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। অভিযানে পাচারকাজে ব্যবহৃত দুটি ফিশিং বোটও জব্দ করা হয়, যা উপকূলীয় অঞ্চলে চোরাচালানবিরোধী তৎপরতায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ১১টার দিকে কোস্ট গার্ড জাহাজ জয় বাংলা সেন্টমার্টিনের ছেঁড়াদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব সংলগ্ন সমুদ্র এলাকায় একটি পরিকল্পিত বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের সময় ওই এলাকায় সন্দেহজনকভাবে চলাচলরত দুটি ফিশিং বোটকে চিহ্নিত করে তল্লাশি চালানো হয়।
তল্লাশিকালে কোস্ট গার্ড সদস্যরা দেখতে পান, বোট দুটিতে শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমারে পাচারের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমাণ পণ্য বহন করা হচ্ছিল। জব্দকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে আনুমানিক ১০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা মূল্যের ১ হাজার ৩০০ বস্তা সিমেন্ট এবং ৭ হাজার ২০০ প্যাকেট মশার কয়েল। এসব পণ্য বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে সীমান্ত অতিক্রম করে মিয়ানমারে পাচারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযান চলাকালে পাচারের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ২২ জনকে আটক করা হয়। কোস্ট গার্ড জানায়, আটককৃত ব্যক্তিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাচারচক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে, যা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। জব্দকৃত মালামাল, পাচারকাজে ব্যবহৃত ফিশিং বোট এবং আটককৃতদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সিয়াম-উল-হক বলেন, “সমুদ্রপথে পাচার ও চোরাচালান রোধে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সর্বদা তৎপর রয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতেও এ ধরনের অভিযান আরও জোরদার করা হবে।” তিনি আরও জানান, উপকূলীয় ও সীমান্তবর্তী এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে অবৈধ বাণিজ্য ও পাচার কার্যক্রম আগেভাগেই প্রতিহত করা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের পাচার শুধু রাজস্ব ক্ষতির কারণ নয়, বরং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও বৈধ বাণিজ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সিমেন্টের মতো নির্মাণসামগ্রী এবং ভোগ্যপণ্যের অবৈধ রপ্তানি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারে, যার প্রভাব পড়ে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। তাই সমুদ্রপথে চোরাচালান দমনে কোস্ট গার্ডের এই ধরনের অভিযান সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয়।
Leave a comment