সব অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে মুক্তি পেলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে কারাবন্দি থাকা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছয় প্রবাসী যোদ্ধা। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর তারা জামিনে মুক্ত হয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে দেশে ফিরছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তাদের বহনকারী বিমানটি সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
এই প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে পরিবারগুলোর মধ্যে স্বস্তি ও আবেগের আবহ বিরাজ করছে। দীর্ঘ অপেক্ষা, আইনি জটিলতা ও অনিশ্চয়তার পর প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার খবরে স্বজনদের চোখে-মুখে স্বস্তির ছাপ স্পষ্ট।
মুক্তি পাওয়া ছয় প্রবাসী জুলাই যোদ্ধা হলেন—চট্টগ্রামের শহিদুল আমিন (মুন্না) ও সাইফুল ইসলাম,বরিশালের শাওন হাওলাদার,লক্ষ্মীপুরের শাহাদাত হোসেন,
নোয়াখালীর জাকের হোসেন রনি,এবং মৌলভিবাজারের মোহাম্মদ ফরহাদ আহমেদ। তারা প্রত্যেকেই জীবিকার তাগিদে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান করছিলেন এবং সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
কারামুক্ত শহিদুল আমিন (মুন্না)-এর স্ত্রী তানিয়া আমিনসহ একাধিক জুলাই যোদ্ধার পরিবারের সদস্যরা মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তানিয়া আমিন বলেন, “বুধবার রাতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয় যে ছয়জনই জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা দেশে পৌঁছাবেন—এই খবরটি আমাদের জন্য ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটিয়েছি। আজ মনে হচ্ছে বুকের ওপর থেকে বড় একটি পাথর নেমে গেছে।”
উল্লেখ্য, জুলাই মাসে বাংলাদেশে সংঘটিত গণঅভ্যুত্থানের প্রতি সংহতি প্রকাশের অভিযোগে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মত প্রকাশ, শান্তিপূর্ণ আলোচনা কিংবা সংহতির বার্তা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় বলে পরিবারের দাবি।
পরবর্তীতে আটক হওয়া প্রবাসীদের একটি অংশ মুক্তি পেলেও অন্তত ২৪ জন বাংলাদেশি দীর্ঘ সময় ধরে কারাবন্দি ছিলেন। এই ছয়জন ছিলেন সেই তালিকার অন্তর্ভুক্ত।
কারাবন্দি প্রবাসীদের মুক্তির দাবিতে পরিবারগুলো দীর্ঘদিন ধরে আবেদন, আইনি পরামর্শ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যোগাযোগ চালিয়ে আসছিল। মানবাধিকারকর্মী ও প্রবাসী অধিকার সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
পরিবারগুলোর অভিযোগ ছিল, অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় মুক্তির জন্য সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতা ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ছয়জনের মুক্তির খবরে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যেও স্বস্তির প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এটিকে ‘আংশিক হলেও ইতিবাচক অগ্রগতি’ হিসেবে উল্লেখ করছেন। একই সঙ্গে এখনো কারাবন্দি থাকা অন্যান্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের মুক্তির দাবিও নতুন করে জোরালো হচ্ছে।
প্রবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের মতে, এই মুক্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকা প্রয়োজন ।
Leave a comment