দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরাকে ঘিরে রাজধানী ঢাকায় দেখা দিয়েছে নজিরবিহীন জনসমাগম। বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে আয়োজিত গণসংবর্ধনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী ও সমর্থক ঢাকায় জড়ো হচ্ছেন। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে রাজধানীর আবাসন ব্যবস্থায়—ঢাকার প্রায় সব হোটেল, গেস্ট হাউজ ও আবাসিক মেস এখন পুরোপুরি পূর্ণ।
উত্তরা, বনানী, মহাখালী, বিমানবন্দর এলাকা থেকে শুরু করে পল্টন, ফকিরাপুল ও মতিঝিল—কোথাও আর একটি খালি কক্ষ বা সিট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অভিজাত হোটেল থেকে শুরু করে সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল ও মেস—সবখানেই ‘হাউসফুল’ অবস্থা। হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে এমন চাপ তারা আগে কখনো দেখেননি।
বাংলাদেশ হোটেল ও গেস্ট হাউজ ওনার অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকায় প্রায় চার হাজারের মতো নিবন্ধিত হোটেল ও গেস্ট হাউজ রয়েছে, যেগুলোর সম্মিলিত ধারণক্ষমতা আনুমানিক চার থেকে পাঁচ লাখ মানুষের। বর্তমানে সেই সবকটি প্রতিষ্ঠানের রুম ও সিট আগেভাগেই বুকড হয়ে গেছে। অনেক হোটেলে দুই-তিন দিন আগেই বুকিং বন্ধ করে দিতে হয়েছে।
রাজধানীর ফকিরাপুল এলাকার এক হোটেল ব্যবস্থাপক জানান, “মঙ্গলবার সকাল থেকেই আমাদের সব রুম পূর্ণ। বুধবার দুপুরের পর থেকে আর কোনো বুকিং নেওয়ার সুযোগ নেই। ফোন ধরার সময়ও নেই—এত কল আসছে।”
হোটেলে জায়গা না পেয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিএনপি নেতাকর্মীরা। কুড়িগ্রাম, সাতক্ষীরা, পঞ্চগড়, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা কর্মীরা জানান, তারা অনেকেই পরিচিত ছাত্র, আত্মীয়স্বজন বা সহকর্মীদের বাসায় আশ্রয় নিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার রাত কাটাচ্ছেন বাস, ট্রাক কিংবা খোলা মাঠে।
সাতক্ষীরা থেকে আসা এক কর্মী বলেন, “তিনটা হোটেল ঘুরেও কোনো রুম পাইনি। শেষ পর্যন্ত এক আত্মীয়ের বাসায় মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছে। কিন্তু তারেক ভাইয়ের জন্য এই কষ্ট স্বীকার করতেও আমাদের আপত্তি নেই।”
এই বাড়তি চাহিদার সুযোগে কিছু এলাকায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠেছে। বিশেষ করে পূর্বাচলের ৩০০ ফুট সড়ক সংলগ্ন এলাকা ও বিমানবন্দর আশপাশের হোটেলগুলোতে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেক কর্মী। যদিও হোটেল মালিকদের একটি অংশ বলছে, বাড়তি চাপ ও সেবার কারণে খরচও বেড়েছে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, দীর্ঘদিনের মন্দার পর তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন রাজধানীর হোটেল খাতে হঠাৎ করে প্রাণ ফিরিয়ে এনেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিকে ঘিরে এমন ব্যস্ততা সাধারণত খুব কমই দেখা যায়।
এদিকে পূর্বাচলের ৩০০ ফুট এলাকায় তারেক রহমানকে সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। বুধবার সকাল থেকেই সেখানে নেতাকর্মীদের ঢল নেমেছে। মঞ্চ নির্মাণ, সাউন্ড সিস্টেম, ব্যানার ও আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আয়োজকরা বলছেন, এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম বড় গণসংবর্ধনা হতে যাচ্ছে।
বিএনপি নেতারা আশা করছেন, এই সমাবেশে প্রায় ৫০ লাখ মানুষের উপস্থিতি হতে পারে। সেই লক্ষ্যে দলটির স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির কয়েক হাজার সদস্য মাঠে কাজ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথ, বিশেষ করে গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও সাভারমুখী সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হতে পারে।
সব মিলিয়ে, তারেক রহমানের দেশে ফেরা শুধু একটি রাজনৈতিক ঘটনা নয়—এটি রাজধানীর জনজীবন, আবাসন ব্যবস্থা ও অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে। ঢাকায় এখন একটাই দৃশ্য—মানুষের ঢল, উচ্ছ্বাস আর প্রতীক্ষা।
Leave a comment