গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস)-এর এক নেতাকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত ব্যক্তির নাম ফরিদ সরকার (৪১)। তিনি গোসিংগা ইউনিয়ন জাসাসের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) দিবাগত গভীর রাতে উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের লতিফপুর গ্রামের কেবিএম ইটাখোলা এলাকায় এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পরপরই এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) এবং সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতোমধ্যে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের হয়েছে কি না, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়নি।
নিহত ফরিদ সরকার শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জামাল সরকারের ছেলে। পারিবারিক সূত্র জানায়, ফরিদ দীর্ঘদিন প্রবাসে অবস্থান করার পর সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন এবং স্থানীয়ভাবে ব্যবসা ও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
নিহতের বাবা জামাল সরকার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, “মঙ্গলবার রাতে আমার ছেলে বাড়িতে ভাত খাচ্ছিল। এমন সময় একটি ফোন আসে। ফোন পাওয়ার পর সে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। পরে গভীর রাতে আমরা জানতে পারি, সে নাকি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “ভোরের দিকে সবুজ মেম্বার ফোন করে আমাদের জানায় ফরিদ অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। আমরা দ্রুত কেবিএম ইটাখোলা থেকে তার রক্তাক্ত দেহ শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।”
পরিবারের সদস্যরা জানান, ফরিদকে হাসপাতালে নেওয়ার সময় তার ডান হাতের কবজি কাটা ছিল এবং মাথা ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। অবস্থার অবনতি দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। পরে সেখানে নেওয়া হলে চিকিৎসক ফরিদ সরকারকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের মা ফরিদা ইয়াসমিন অভিযোগ করে বলেন, “আমার ছেলে ইটাখোলায় মাটি ও বালির ব্যবসা করত। রাতে তাকে ফোন করে কে বা কারা ডেকে নিয়ে যায়। প্রতিবেশীদের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। তারাই আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।”
নিহত ফরিদের ফুফাতো ভাই মাসুদ রানা জানান, ফরিদ প্রায় ১৫–১৬ বছর জর্ডানে প্রবাসজীবন কাটিয়েছেন। চলতি বছরের ৫ আগস্টের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। “ফরিদ জাসাসের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল এবং পাশাপাশি মাটি ও বালির ব্যবসা করত। জমি সংক্রান্ত বিরোধ ছাড়া তার সঙ্গে কারও শত্রুতা ছিল না,” বলেন তিনি।
মাসুদ রানার দাবি, মৃত্যুর আগে ফরিদ কয়েকজনের নাম বলেছিলেন বলে তারা শুনেছেন, যা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
ঘটনার সময়কার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে পরিচয় দেওয়া ইটাখোলার শ্রমিক জাকির ও মিনারুল জানান, রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ফরিদ সরকার ও আরও একজন ব্যক্তি সেখানে এসে আগুন পোহাচ্ছিলেন। এ সময় হঠাৎ করে ৫ থেকে ৭ জন লোক রামদাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সেখানে প্রবেশ করে।
তারা জানান, দুর্বৃত্তদের ভয়ভীতির মুখে তারা একটি ঘরের ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকেন। বাইরে থেকে চিৎকারের শব্দ পেলেও ভয়ে কেউ বের হননি।
গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কালিয়াকৈর সার্কেল) মিরাজুল ইসলাম বলেন, “প্রাথমিকভাবে এটিকে দুর্বৃত্তদের হাতে সংঘটিত একটি হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলামত ও ক্লু পাওয়া গেছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে সেগুলো প্রকাশ করা যাবে না।”
পুলিশ কর্মকর্তা জানান, নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার পেছনে কী কারণ রয়েছে—ব্যক্তিগত বিরোধ, ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব না কি রাজনৈতিক কোনো প্রেক্ষাপট—সব দিক মাথায় রেখে তদন্ত এগোচ্ছে বলে তিনি জানান।
Leave a comment