বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলায় ব্যবসায়ী পিন্টু আকন্দকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দুই আসামির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বগুড়ার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল হক শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।
পুলিশের পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গ্রেফতারকৃত দুই আসামিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। তবে উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত প্রত্যেকের জন্য পাঁচ দিনের করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মাইক্রোবাস চালক সানোয়ার হোসেন (৪০) এবং তার সহযোগী সাকিব (২৪)। সানোয়ার হোসেন বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাজাপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সাকিব একই উপজেলার করমজি গ্রামের বাসিন্দা বলে জানিয়েছে পুলিশ।
নিহত পিন্টু আকন্দ নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার লোহাচূড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। জীবিকার তাগিদে তিনি দীর্ঘদিন ধরে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া সদরে একটি জুতার শোরুম পরিচালনা করতেন। স্থানীয়ভাবে তিনি একজন পরিশ্রমী ও শান্ত স্বভাবের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত সোয়া ৯টার দিকে পিন্টু আকন্দ তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে অবস্থান করছিলেন। এ সময় একদল দুর্বৃত্ত আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। অপহরণের পুরো ঘটনাটি ওই এলাকার একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ হয়। ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।
অপহরণের প্রায় দুই ঘণ্টা পর, রাত সোয়া ১১টার দিকে বগুড়ার পার্শ্ববর্তী আদমদীঘি উপজেলার কুমারপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ পিন্টু আকন্দের মরদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধারকালে তার নাক ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল, যা দেখে প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধে হত্যার ধারণা করে পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী সাবিনা খাতুন বাদী হয়ে মঙ্গলবার দুপচাঁচিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ৬ থেকে ৭ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। পরে আটককৃত সানোয়ার হোসেন ও সাকিবকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়।
দুপচাঁচিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানান, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটি পুলিশ জব্দ করেছে। তিনি বলেন, “উদ্ধারের সময় নিহতের নাক ও মুখ স্কচটেপ দিয়ে বাঁধা ছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। তবে হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।”
ওসি আরও জানান, গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডের পেছনের মূল কারণ, পরিকল্পনা এবং এতে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের পরিচয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছে পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত তথ্য আপাতত প্রকাশ করা যাচ্ছে না বলেও জানান তিনি।
ময়নাতদন্ত শেষে নিহত পিন্টু আকন্দের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
Leave a comment