রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও ৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। সর্বশেষ এই গ্রেপ্তারের ফলে, ঘটনায় আটক ব্যক্তির মোট সংখ্যা দাঁড়াল ২৬ জনে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের শনাক্তে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া ও পাবলিক রিলেশন্স বিভাগ থেকে পাঠানো এক বার্তায় নতুন করে ৯ জন গ্রেপ্তারের তথ্য নিশ্চিত করা হয়। বার্তায় বলা হয়, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য এবং চলমান তদন্তের ভিত্তিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত
পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. নজরুল ইসলাম জানান, ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ওই দিন তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে এবং মামলার অগ্রগতি অনুযায়ী আরও গ্রেপ্তার হতে পারে।
ডিএমপি সূত্রে জানা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর রাত আনুমানিক ১১টা ১৫ মিনিট থেকে ১৯ ডিসেম্বর রাত ২টা ৩০ মিনিটের মধ্যে অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার লোক বেআইনিভাবে সমবেত হয়ে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায়। হামলাকারীরা ভবনের বিভিন্ন অংশে ভাঙচুর করে এবং আগুন ধরিয়ে দেয়, যার ফলে অফিসের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পুলিশ জানায়, ঘটনার খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তবে সে সময় হামলাকারীরা পুলিশের ওপর মারমুখী আচরণ করে এবং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নির্বাপণ করে এবং ভবনের ভেতরে আটকে পড়া ব্যক্তিদের নিরাপদে উদ্ধার করে।
ঘটনার পরপরই গণমাধ্যমের ওপর এই হামলাকে ‘ন্যক্কারজনক’ উল্লেখ করে ডিএমপি জানায়, হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তারে বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। মামলার প্রেক্ষিতে তেজগাঁও থানা পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করছে। তদন্ত কর্মকর্তারা জানান- সিসিটিভি ফুটেজ, মোবাইল ফোনের তথ্য, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিসহ বিভিন্ন আলামত বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নাইম নামে একজনের কাছ থেকে লুণ্ঠিত নগদ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিএমপি। পাশাপাশি ওই লুণ্ঠিত অর্থ দিয়ে কেনা একটি টেলিভিশন ও একটি ফ্রিজ জব্দ করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, উদ্ধারকৃত এসব আলামত ঘটনার সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃতদের সম্পৃক্ততার গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ডিএমপি আরও জানায়, এই ঘটনায় দণ্ডবিধি (পেনাল কোড), বিশেষ ক্ষমতা আইন, সাইবার সিকিউরিটি অধ্যাদেশ এবং সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ধারায় তেজগাঁও থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে হামলার মতো ঘটনায় কোনো ধরনের ছাড় দেওয়া হবে না। তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার পরিকল্পনাকারী, উসকানিদাতা ও সরাসরি হামলায় অংশগ্রহণকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণের মাধ্যমে নেপথ্যের ভূমিকা শনাক্ত করা হবে।
এদিকে গণমাধ্যমের ওপর হামলার ঘটনায় সাংবাদিক সমাজসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে। তারা হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে। বিশ্লেষকদের মতে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গণতান্ত্রিক সমাজের একটি মৌলিক শর্ত, আর এ ধরনের হামলা সেই ভিত্তিকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
ডিএমপি জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কারওয়ান বাজারসহ আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
Leave a comment