ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে আবারও ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, মাদুরো যদি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন, তবে সেটিই হবে তার জন্য সবচেয়ে ‘ভালো’ সিদ্ধান্ত। তবে তিনি যদি ক্ষমতায় টিকে থাকতে প্রতিরোধের পথ বেছে নেন, সেক্ষেত্রে কঠোর পরিণতির মুখে পড়তে হবে—এমন হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন ট্রাম্প।
সোমবার (২২ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প বলেন, মাদুরোর ভবিষ্যৎ অনেকটাই তার নিজের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি সবকিছু মাদুরোর হাতেই আছে। তবে আমার মতে, ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়াই তার জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ হবে। একই সঙ্গে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না।
ক্ষমতা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানালে কী হবে—এমন প্রশ্নে ট্রাম্প আরও কড়া সুরে কথা বলেন। তিনি বলেন, মাদুরো যদি ‘তেড়িবেড়ি’ করেন বা প্রতিরোধের চেষ্টা করেন, তবে এটি হবে তার শেষ সুযোগ। যা আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এই মন্তব্যের পটভূমিতে গত কয়েক মাস ধরে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা লক্ষণীয়ভাবে বেড়েছে। মাদক চোরাচালান দমনের অজুহাতে ওই অঞ্চলে একাধিক যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে এবং হাজার হাজার মার্কিন সেনা অবস্থান নিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত দুই সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুটি তেলবাহী ট্যাংকার জব্দ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যা কূটনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
ট্যাংকার জব্দ ও সেনা মোতায়েনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাংবাদিকরা। তারা জানতে চান, এসব পদক্ষেপ কি সরাসরি মাদুরোকে জোরপূর্বক ক্ষমতাচ্যুত করার পরিকল্পনার অংশ? জবাবে ট্রাম্প সরাসরি কিছু না বললেও বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। তিনি বলেন, “দেখা যাক কী করা যায়,”—যা ভবিষ্যতে আরও কঠোর পদক্ষেপের ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে এই বক্তব্যের পাশাপাশি কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রোরও তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, গুস্তাভো পেত্রো যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু নন। ট্রাম্প বলেন, “তিনি খুবই খারাপ, খুব খারাপ লোক। তাকে সাবধান থাকতে হবে।” এ সময় তিনি কলম্বিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে মাদক পাচারের অভিযোগও করেন, যদিও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভেনেজুয়েলাকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক চাপ ক্রমেই নতুন মাত্রা পাচ্ছে। মাদক চোরাচালান প্রতিরোধের যুক্তি সামনে রেখে শুরু হলেও, বাস্তবে এটি মাদুরো সরকারের ওপর সরাসরি চাপ প্রয়োগের কৌশল বলেই মনে করছেন অনেক আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক।
এদিকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে মার্কিন সামরিক অভিযানের মানবিক দিক নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হচ্ছে। তবে স্থানীয় সূত্র ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এসব অভিযানে এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের সবাই মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কি না—তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সমালোচকরা।
ভেনেজুয়েলার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকট দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক আলোচনার কেন্দ্রে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা মাদুরো সরকারের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশ এখনো তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের সর্বশেষ বক্তব্য পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।
Leave a comment