মেক্সিকোর মধ্যাঞ্চলে একটি মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় অন্তত সাতজন নিহত হয়েছেন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করার সময় একটি ছোট বেসরকারি বিমান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়।
স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকারী সংস্থার বরাতে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সামা টিভি জানায়, বিমানটিতে মোট ১০ জন আরোহী ছিলেন—এর মধ্যে আটজন যাত্রী এবং দুইজন ক্রু সদস্য। বিমানটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয় শহর আকাপুলকো থেকে উড্ডয়ন করেছিল। তবে উড্ডয়নের কিছু সময় পরই বিমানে যান্ত্রিক সমস্যার লক্ষণ দেখা দেয়।
কর্তৃপক্ষ জানায়, যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেওয়ার পর পাইলট দ্রুত নিকটবর্তী একটি নিরাপদ স্থানে জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় একটি ফুটবল মাঠকে অবতরণের জন্য বেছে নেওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য অনুযায়ী, বিমানটি দ্রুত নিচে নেমে আসছিল এবং তখনই এর অস্বাভাবিক গতিবিধি নজরে আসে।
অবতরণের মুহূর্তে বিমানটি হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাঠের সীমানা অতিক্রম করে পাশের একটি গুদামঘরের দিকে ছুটে যায়। সেখানে আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গেই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। সংঘর্ষের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, কয়েকজন আরোহী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।
দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স এবং অন্যান্য জরুরি সেবা সংস্থার সদস্যরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছান। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। তবে আগুন ও ধোঁয়ার কারণে উদ্ধার কাজে বেগ পেতে হয়।
স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, উদ্ধারকারীরা কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও অন্তত সাতজনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। আহতদের নিকটবর্তী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তাদের অবস্থা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে কি না, তা তদন্ত শেষে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
দুর্ঘটনার একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিমানটি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নিচে নামছে এবং মুহূর্তের মধ্যেই একটি স্থাপনায় আঘাত হানার পর আগুনের কুণ্ডলী উঠতে থাকে। ভিডিওটি ঘিরে অনলাইনে ব্যাপক আলোচনা ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
তবে কর্তৃপক্ষ সাধারণ জনগণকে গুজব ও যাচাইহীন তথ্য ছড়িয়ে না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত দুর্ঘটনার বিষয়ে নিশ্চিত তথ্যের জন্য সরকারি বিবৃতির ওপর নির্ভর করা উচিত।
মেক্সিকোর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ নির্ধারণে একটি আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বিমানের রক্ষণাবেক্ষণ নথি, ফ্লাইট ডেটা এবং ক্রুদের যোগাযোগ রেকর্ড খতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া বিমানে থাকা যাত্রী ও ক্রু সদস্যদের পরিচয় নিশ্চিত করার কাজও চলছে। নিহতদের পরিবারকে অবহিত করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনে মনস্তাত্ত্বিক সহায়তা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
Leave a comment