মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের আলোচিত মা–মেয়ে হত্যা মামলার প্রধান আসামি গৃহকর্মী আয়েশা আক্তার শেষ পর্যন্ত তার শাশুড়ির দেওয়া তথ্যেই পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন। ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া ইউনিয়নের কয়ারচর গ্রাম থেকে তাকে এবং তার স্বামী জামাল সিকদার রাব্বিকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তার করে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।
এই গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়তেই কয়ারচর গ্রামে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। দীর্ঘদিন পর স্বামীকে নিয়ে এলাকায় ফিরে আসা এবং সংশ্লিষ্ট হত্যা মামলার জড়িত থাকার বিষয়টি স্থানীয়দের বিস্মিত করেছে।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানা গেছে, মা–মেয়ে হত্যার পর আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বি লঞ্চযোগে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে নলছিটিতে আসেন। তারা রাব্বির দাদা রুস্তুম সিকদারের বাড়িতে আশ্রয় নেন। রাব্বি প্রায় ১৫ বছর ধরে এলাকায় না ফেরায় অনেকেই তাকে চিনতে পারেননি। তার বাবা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকায় বাড়িতে কেবল বৃদ্ধ দাদি ছিলেন।
কয়ারচর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল্লাহ মন্নান মৃধা চুন্নু বলেন, “রাব্বির বাবা–মায়ের বিচ্ছেদের পর ছেলেটি এলাকায় থাকেনি। ১৫ বছর পর হঠাৎ তাকে স্ত্রীসহ দেখে সবাই অবাক হয়েছে। পরে জানা যায়, সে একটি ধনী পরিবারের মেয়েকে বিয়ে করেছে।”
গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আয়েশার শাশুড়ি রুমা বেগম। তিনি পুলিশকে জানান, আয়েশা ও রাব্বি নলছিটির দাদা বাড়িতে অবস্থান করছেন। এই তথ্য পাওয়ার পর পুলিশ দ্রুত অভিযান পরিচালনা করে তাদের গ্রেপ্তার করে।
মোহাম্মদপুর থানার এসআই মো. সহিদুল ইসলাম মাসুম বলেন, “শাশুড়ির সহযোগিতা না থাকলে তাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন হতো। আমরা খবর পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অভিযান চালিয়ে আয়েশা ও রাব্বিকে আটক করি।”
পুলিশ জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের ওই বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় চুরি করতে গিয়ে গৃহিণী লায়লা আফরোজ (৪৮) ও তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫) এর সঙ্গে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তিনি ছুরিকাঘাত করেন।
লায়লা আফরোজ ছিলেন গৃহিণী, আর তার স্বামী এম জেড আজিজুল ইসলাম পেশায় একজন শিক্ষক। নিহত নাফিসা মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। আয়েশা ও তার স্বামীর গ্রেপ্তারের খবর কয়ারচর গ্রামে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয়রা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অনেকে ধারণা করছেন, আয়েশার স্বামী রাব্বিও তাকে পালাতে সাহায্য করেছেন।
মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, আয়েশা ও রাব্বিকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। হত্যার উদ্দেশ্য, ঘটনার সময়কার আচরণ, এবং হত্যার আগে–পরের সব কিছুই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন,“এটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মামলা। হত্যার ধরন এবং ঘটনাস্থলের প্রমাণ বলছে, এখানে আরও তথ্য লুকিয়ে থাকতে পারে। আমরা সবকিছু অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করছি।”
Leave a comment