পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে নবনির্মিত ‘বাবরি মসজিদ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেই কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হয়েছে “পাঁচ লক্ষ কণ্ঠে গীতা পাঠের মহাসমারোহ”। সনাতনী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত এই বিশাল সমাবেশ মূলত মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তরের পরদিনই অনুষ্ঠিত হয়, ফলে ঘটনাটিকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই হাওড়া ও শিয়ালদহ রেলস্টেশন চত্বরে দেখা যায় উপচে পড়া ভক্তদের ভিড়। বহু ভক্ত শনিবার রাত থেকেই শহরে পৌঁছাতে শুরু করেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ, দক্ষিণবঙ্গ, জঙ্গলমহল ও সুন্দরবনের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তরপ্রদেশসহ ভারতের একাধিক রাজ্য থেকে আগমন ঘটে হাজারো মানুষের। প্রতিবেশী দেশ নেপাল ও বাংলাদেশ থেকেও অনেকে অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
ভক্তদের সহায়তায় হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন এলাকায় সনাতন সংস্কৃতিক সংগঠন দুটি পৃথক ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে। সেখানে বিশ্রাম, পানীয় জল, মেডিকেল সাপোর্ট ও দিকনির্দেশনার ব্যবস্থা রাখা হয়।
স্টেশন থেকে ভক্তদের দীর্ঘ সারি নদীতীরের ফেরিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। গঙ্গা পেরোতেই ফেরিঘাটে সকাল থেকেই চরম চাপ দেখা যায়। ফেরি কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ মিলে ভিড় নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সকাল থেকেই জড়ো হতে থাকেন ভক্ত, সাধু–সন্ত ও ধর্মীয় নেতারা। আয়োজকদের দাবি, প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ একযোগে গীতা পাঠে অংশ নেন—যা বাংলার ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ।
মাঠে বসে থাকা ভক্তরা বলেন, সমাজে শান্তি, সাম্য ও ধর্মীয় ঐক্যের বার্তা ছড়িয়ে দিতে তারা এই পাঠে অংশ নিচ্ছেন। কেউ কেউ জানান, এটি “বিভেদের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক প্রতিবাদ”—তবে আয়োজকরা দাবি করেন, এ আয়োজন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়; বরং এটি সনাতন সংস্কৃতির এক মহা-উৎসব।
বিরাট সমাবেশ ঘিরে প্রশাসনও ছিল সতর্ক। হাওড়া ফেরিঘাট থেকে ব্রিগেড পর্যন্ত যাত্রাপথে পুলিশ মোতায়েন ছিল। জনসমাগম নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী, ভ্রাম্যমাণ টহলদল, মেটাল ডিটেক্টর ও ড্রোন নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। পুলিশের মতে, কোনো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা ছাড়াই অনুষ্ঠান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
শনিবার বিকেলে মুর্শিদাবাদ জেলায় নবনির্মিত ‘বাবরি মসজিদ’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কলকাতায় বিশাল গীতা পাঠ আয়োজন করাকে, রাজনৈতিক মহল একে “প্রতীকী পাল্টা বার্তা” হিসেবে দেখছে।
বিশ্লেষকদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের সমাজ-রাজনীতি দীর্ঘদিন ধরেই ধর্মীয় সংবেদনশীলতায় প্রভাবিত। তাই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর ও গীতা পাঠ—দুই ঘটনাই জনগণের আবেগকে নাড়া দিচ্ছে। বিরোধী দলের একাংশের দাবি, সারাদেশে ধর্মীয় মেরুকরণের যে ধারা দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গেও তার প্রতিফলন শুরু হয়েছে।রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা মনে করছেন, এই ঘটনাসমূহ ভবিষ্যতে নির্বাচনী প্রচারে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
Leave a comment