ফোনে আড়ি পাতার বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, কেবলমাত্র সরকার অনুমোদিত সংস্থাই বৈধভাবে ফোনে আড়ি পাতবে । অনুমোদনহীন কোনো সংস্থার এমন কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন, নিরাপত্তা এবং সাম্প্রতিক জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে এ বৈঠকে আলোচনা হয়। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,“সরকারের যেসব সংস্থা অথরাইজড, তারা তাদের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ফোনে আড়ি পাততে পারে। যারা অনুমোদিত নয়, তারা কোনোভাবেই এ ধরনের কাজ করতে পারবে না।”
তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে ফোন নজরদারি সংক্রান্ত সরকারি নীতিমালা ও কর্তৃত্বের পরিধি আরও স্পষ্ট হয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা, সাইবার অপরাধ দমন এবং নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যক্রমে অনুমোদিত সংস্থাগুলোর ভূমিকার ওপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে নিরাপত্তা দেওয়া হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,“যদি তিনি নিরাপত্তা চান, আমরা অবশ্যই দেবো। বাংলাদেশে কারও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কোনো কারণ নেই। যার নিরাপত্তা প্রয়োজন, তাকে নিরাপত্তা দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, দেশে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং কারও নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে—এমন কোনো তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে নেই। তারেক রহমানের ব্যাপারে আলাদাভাবে কোনো আলোচনা হয়নি বলেও জানান তিনি। ২০০৯ সালের বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান,“রিপোর্টটি গুরুত্বসহকারে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। যেসব সুপারিশ বাস্তবসম্মত এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কার্যকর, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।”
বহুল আলোচিত এই মামলার সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপত্তা কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সভায় ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কতটি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, তা চূড়ান্ত হয়নি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন,“চূড়ান্ত তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, নির্বাচনী পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, নির্বাচনে ফোর্সদের জন্য বডি ক্যামেরা কেনার বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। তবে কী পরিমাণ ক্যামেরা কেনা হবে এবং কখন কেনা হবে—সেটি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
আইনশৃঙ্খলা কোর কমিটির এই বৈঠকে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র, বডি ক্যামেরা ব্যবহার, বিডিআর হত্যাকাণ্ড মামলার রিপোর্ট এবং রাজনৈতিক নেতাদের নিরাপত্তা—এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়।
Leave a comment