ময়মনসিংহের ত্রিশালে সরকারি নজরুল একাডেমি মাঠে বন্ধু মুনতাসির ফাহিমকে কুপিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত যুবক অহিদুল ইসলাম। আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে তিনি দাবি করেছেন, ফাহিম তাকে ‘কালো জাদু’ করেছিলেন, যা নাকি তাঁর জীবনে অশান্তি ও দুর্ভাগ্য বয়ে এনেছিলো। এজন্যই তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন ।
ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধুর মধ্যে এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোক ও বিস্ময়। পরিবার, বন্ধু এবং তদন্তকারী কর্মকর্তারা এই ঘটনা ঘিরে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে একটি ‘চাইনিজ কুড়াল’ হাতে ত্রিশাল থানায় হাজির হন অহিদুল ইসলাম। থানায় প্রবেশ করেই তিনি পুলিশকে বলেন,“ফাহিম কালো জাদু করে আমার জীবন নষ্ট করে দিয়েছে। তাই তাকে কুপিয়ে হত্যা করেছি।”
এমন স্বীকারোক্তি শুনে পুলিশ প্রথমে হতবাক হয়ে যায়। পরে তাঁকে আটক করা হয় এবং তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ রাতে নজরুল একাডেমি মাঠে যায়। মাঠের পূর্ব পাশের পানির ট্যাংকের পাশে পড়ে ছিল মুনতাসির ফাহিমের রক্তাক্ত মরদেহ। পুলিশ তাৎক্ষণিকভাবে মরদেহ উদ্ধার করে এবং আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে নিলে অহিদুল ইসলাম তাঁর পূর্বের বক্তব্যই পুনর্ব্যক্ত করেন। ত্রিশাল থানার ওসি মনসুর আহমেদ জানান,“আসামি আদালতে বলেছেন—ফাহিম তাকে কালো জাদু করেছিল। তাই ক্ষোভে সে তাকে হত্যা করেছে। দুইজনই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। হত্যার পরও সে নিজেই থানায় এসে জানিয়েছে।”
ওসি আরও বলেন, বিষয়টি প্রথম থেকেই সন্দেহজনক মনে হচ্ছে। তদন্তে নানামুখী দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ত্রিশাল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) এসএম হাসান ইসরাফিল জানান, “আসামি বলছে, ফাহিম তাকে কালো জাদু করে প্রভাবিত করছিল। এজন্য সে কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারত না। তার মতে, জীবন আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।” তিনি আরও জানান, “আমরা কালো জাদুর অভিযোগকেও তদন্তের মধ্যে রেখেছি। তবে প্রাথমিক ধারণা, এর পেছনে নারী-সংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকতে পারে।”
নিহত মুনতাসির ফাহিম ত্রিশাল ইউনিয়নের চিকনা মনোহর গ্রামের বাদল মিয়ার ছেলে। মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন তিনি। চার মাস আগে দেশে আসেন । ফাহিমের পরিবার জানিয়েছে—আগামী ২৯ নভেম্বর তার মালয়েশিয়া ফিরে যাওয়ার কথা ছিল।২৫ ডিসেম্বর থেকে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিয়ে দেশে অবস্থান করছিলেন।
অভিযুক্ত অহিদুল ইসলাম ত্রিশাল পৌরসভার দরিরামপুর গ্রামের জহিরুল ইসলামের ছেলে। দুজনের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব ছিল বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করেছে। স্থানীয়দের কেউই ভাবতে পারছেন না, কীভাবে এমন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডে রূপ নিল।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন—মানসিক অস্থিরতা,ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, সম্পর্কগত জটিলতা, নারী-সংক্রান্ত বিষয়, অথবা অতিমাত্রার কুসংস্কার —এসব বিষয় এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভূমিকা রাখতে পারে।
পুলিশ জানিয়েছে, আদালতে স্বীকারোক্তি দিলেও আসামির বক্তব্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত উদ্দেশ্য উদ্ঘাটনে আরও জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রমাণ সংগ্রহ চলছে।
Leave a comment