রাজধানীর অত্যাধুনিক আবাসিক পরিকল্পনা ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ প্রকল্পে ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে দায়ের করা বহুল আলোচিত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেছে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪।
সোমবার (১ ডিসেম্বর) বিচারক রবিউল আলম এই মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনাকে ৫ বছর কারাদণ্ড এবং ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, তার বোন শেখ রেহানাকে ৭ বছর কারাদণ্ড ও একই অঙ্কের জরিমানা এবং শেখ হাসিনার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানাকে ২ বছর কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট মামলায় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাসহ মোট ১৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসা অনিয়ম ও বিচারে প্রমাণিত অভিযোগের ভিত্তিতে এই রায়কে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত বিচারিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন গত ১৩ জানুয়ারি মামলাটি দায়ের করেন। অভিযোগ করা হয় যে, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় প্রভাব খাটিয়ে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এবং নিয়ম না মেনে শেখ রেহানাসহ কয়েকজন ব্যক্তি ১০ কাঠা সরকারি প্লট নিজেদের দখলে নেন। এই অনিয়মে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও প্রশাসনিক ব্যক্তিরাও যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।
প্রাথমিক তদন্ত শেষে মামলায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে ১০ মার্চ অতিরিক্ত দুইজন—সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ১৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
রায়ে দণ্ডপ্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফসহ আরও অনেকে।
অভিযোগপত্র অনুযায়ী, তারা সবাই একযোগে অবৈধভাবে প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে ভূমিকা রেখেছেন। এতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের নীতিমালা লঙ্ঘিত হয়েছে।
মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষ্যগ্রহণ, জেরা ও প্রমাণ বিশ্লেষণ শেষে বিচারক রবিউল আলম অভিযোগগুলোকে প্রমাণিত বলে রায়ে উল্লেখ করেন।
মামলার সমন্বয়ক ও দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মঈনুল হাসান জানান:“সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়টি দুর্নীতিবিরোধী প্রাতিষ্ঠানিক প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।”
রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ আছে। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, যেসব আসামি রায়ের সঙ্গে একমত নন তারা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। মামলার বেশ কিছু আসামি ইতোমধ্যে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন; তাদের বিষয়ে পৃথক আইনি প্রক্রিয়া চলবে।
Leave a comment