চট্টগ্রামের আলোচিত সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ‘ছোট সাজ্জাদ’ এবং তার স্ত্রী তামান্না শারমিনকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পৃথক কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ছোট সাজ্জাদকে পাঠানো হয়েছে রাজশাহী কারাগারে, আর তামান্নাকে রাখা হয়েছে ফেনী কারাগারে।
স্থানান্তরের ঘটনাটি ঘটেছিল গত সপ্তাহে, তবে বিষয়টি জানাজানি হয় গতকাল সোমবার (২৪ নভেম্বর)। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল হোসেন নিশ্চিত করেছেন যে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামজুড়ে সাজ্জাদ বাহিনীর তৎপরতা চলছিল। কারাগারে থাকলেও শীর্ষ সহযোগী মোহাম্মদ রায়হান ও মোবারক হোসেনের মাধ্যমে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
গত ৫ নভেম্বর বিএনপির মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লার গণসংযোগে সাজ্জাদ আলী খানের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত সরোয়ার বাবলাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন এরশাদ উল্লাসহ আরও পাঁচজন। পরবর্তী মামলায় পলাতক বড় সাজ্জাদসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়।
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ অপরাধ ইতিহাস-
• ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট: অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে প্রকাশ্যে গুলি করে মাসুদ কায়সার ও আনিসকে হত্যা।
• ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর: নগরের চান্দগাঁও এলাকায় চায়ের দোকানের সামনে যুবক আফতাব উদ্দিন তাহসিনকে গুলি করে হত্যা।
• ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর: কালারপুল এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে গিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি।
• ২০২৩ সালের ৫ ডিসেম্বর: সাজ্জাদকে ধরতে গেলে পুলিশের দিকে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে দুই পুলিশ সদস্যসহ চারজন আহত হন।
চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি নিজের ফেসবুক লাইভে বায়েজিদ থানার ওসিকে পেটানোর হুমকি দিয়ে আবার আলোচনায় আসেন তিনি। এরপর নগর পুলিশ তাকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। ১৫ মার্চ ঢাকার এক শপিংমল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
সাজ্জাদের গ্রেফতারের পর তার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নেন স্ত্রী তামান্না—এমন অভিযোগও রয়েছে। ২৯ মার্চ বাকলিয়া থানার এক্সেস রোডে গুলি করে দুইজনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় তামান্নাকে অভিযুক্ত করা হয়। পরে ১০ মে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।
রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পৃথক কারাগারে পাঠানো হয়েছে এই দম্পতিকে। ছোট সাজ্জাদের বিরুদ্ধে চলমান একাধিক মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারণা করছে তাদের সরানোর ফলে চট্টগ্রামের সন্ত্রাসী কার্যক্রম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।
Leave a comment