ফরিদপুরের আলোচিত নববধূ সাজিয়া আফরিন রোদেলা হত্যা মামলায় স্বামী সোহানুর রহমান সোহানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি তাকে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন। একই রায়ে মামলার অপর সাত আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। রায় ঘোষণার সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহান আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। জানা গেছে, তিনি বর্তমানে সুইডেনে পলাতক রয়েছেন। এ কারণে আদালত ইন্টারপোলের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই শেষ হয়েছিল সাজিয়া আফরিন রোদেলার জীবন। তিনি ছিলেন ফরিদপুর শহরের আলিপুর খাঁপাড়া মহল্লার শওকত হোসেন খানের কন্যা এবং সরকারি সারদা সুন্দরী মহিলা কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। ২০১৭ সালের ১১ জানুয়ারি শহরের গোয়ালচামট মোল্লাবাড়ি সড়কের মিজানুর রহমান সেন্টুর ছেলে সোহানুর রহমান সোহানকে বিয়ে করেন রোদেলা। কিন্তু সুখের সংসার টেকেনি দেড় মাসও।
বিয়ের পর থেকেই স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা যৌতুকের দাবিতে রোদেলার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। বিয়ের দেড় মাস পর ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে ফরিদপুর শহরের স্বামীর বাড়ি থেকে রোদেলার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
ঘটনার পরের দিন অর্থাৎ ১ মার্চ ২০১৭ রোদেলার মা রুমানা বেগম বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা (নং ৪১৭/১৭) দায়ের করেন। মামলায় অভিযুক্ত করা হয় স্বামী সোহানসহ আটজনকে।
মামলার তদন্তে উঠে আসে, যৌতুকের দাবিতে রোদেলাকে প্রায়ই নির্যাতন করা হতো। ঘটনার দিনও একই কারণে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়।
রোদেলার ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে শ্বাসরোধে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তদন্ত শেষে ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা। অন্য আসামিরা ছিলেন -ননদ জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা, শাশুড়ি শিউলি আক্তার, ভাসুর মীর শামসুল ইসলাম, ভাসুরের স্ত্রী সুমা আক্তার, শ্বশুর মীর মসিউর রহমান, ননদের স্বামী মীর নাসিরুল ইসলাম ও মামাতো ভাই মীর শাকিব হাসান।
বিচারক শামীমা পারভীন রায়ে উল্লেখ করেন, মামলার সাক্ষ্যপ্রমাণ, সাক্ষীদের জবানবন্দি ও ফরেনসিক রিপোর্টে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, স্বামী সোহানই রোদেলাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন। অন্যদিকে অন্য সাত আসামির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ প্রমাণের অভাবে তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। রায়ে আদালত বলেন,“একটি পরিবারের ভেতর যৌতুক নামের অভিশাপে এক তরুণী প্রাণ হারিয়েছেন। এটি সমাজের জন্য গভীর সতর্কবার্তা।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া রতন বলেন,“দীর্ঘদিনের আইনি লড়াইয়ের পর আমরা আজ ন্যায়বিচার পেয়েছি। আদালত প্রমাণিত সত্যের ভিত্তিতে রায় দিয়েছেন। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট।” তিনি আরও জানান, রায় কার্যকর করতে পলাতক আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
Leave a comment