ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গভীর রাতে রেললাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (১২ নভেম্বর) দিবাগত রাত পৌনে ২টার দিকে সদর উপজেলার দুবলা এলাকায় দুর্বৃত্তরা এ অগ্নিসংযোগ করে। এতে চট্টগ্রামগামী তুর্ণা নিশিথা এক্সপ্রেস ও বিজয় এক্সপ্রেস সাময়িকভাবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে আটকে পড়ে। পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, এই অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নাশকতা বা ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোর চেষ্টা করেছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শফিকুল ইসলাম জানান, রাতের বেলায় রেললাইন দিয়ে ট্রেন চলাকালীন সময়ে স্থানীয়রা আগুন দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। তিনি বলেন, “দুর্বৃত্তরা রেললাইনের ওপর প্লাস্টিকের পাইপে আগুন দেয়। আমরা খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাই। তবে ততক্ষণে আগুন অনেকটাই নিভে যায় এবং দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।” ওসি আরও জানান, এ ঘটনায় রেল চলাচল কয়েক মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল। পরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ট্রেনগুলোকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক আছে এবং পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাতের নীরবতা ভেঙে দূর থেকে হঠাৎ আগুনের আলো ও ধোঁয়া দেখা যায়। পরে রেলওয়ে পুলিশ এসে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। তারা সন্দেহ করছেন, এটি হয়তো রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো
নাশকতার অংশ হতে পারে, কারণ ঘটনার সময় ঢাকায় চলছিল নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের লকডাউন কর্মসূচি। তদন্তকারীরা ঘটনাস্থল থেকে কিছু জ্বালানি পদার্থ ও পোড়া প্লাস্টিকের টুকরো সংগ্রহ করেছেন। এসব আলামত পরীক্ষার জন্য ফরেনসিক বিভাগে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ঘটনাটি আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। নাশকতার উদ্দেশ্যে আগুন দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তা শনাক্তে আমরা কাজ শুরু করেছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ যাচাই করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, ট্রেনযাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রেললাইনের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে অতিরিক্ত টহল ও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের থেকে বলা হয়েছে, এ ধরনের ঘটনায় যেন ভবিষ্যতে ট্রেন চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ২৪ ঘণ্টার নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে রেললাইন বা সড়কপথে নাশকতার আশঙ্কা বাড়ছে।
তবে এই ধরনের কর্মকাণ্ড জনগণের জীবন ও নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে, যা আইনের চোখে গুরুতর অপরাধ। সন্ধ্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত এলাকায় পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। কোনো সহিংসতা বা পুনরায় নাশকতার ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ বলছে, দায়ীদের শনাক্তে অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a comment