মিসরের এক সাধারণ পরিবারে ঘটেছে এক অসাধারণ ঘটনা। ২০২৬ সালের হজের জন্য লটারির মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন একই পরিবারের তিন ভাইবোন। রাজধানী কায়রোয় অনুষ্ঠিত এ বছরের সরকারি হজ লটারির ফলাফল ঘোষণার সময় এই বিরল দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন শতাধিক মানুষ।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, লটারির ফলাফল ঘোষণার সময় প্রথমে পরিবারের এক বোনের নাম ঘোষণা করা হয়। কিছুক্ষণ পরই ঘোষণায় আসে বড় ভাইয়ের নাম। হঠাৎ নিজের নাম শুনে তিনি কৃতজ্ঞতায় সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। কিন্তু বিস্ময় এখানেই শেষ হয়নি—মুহূর্তের মধ্যে ঘোষণাকারীর মুখ থেকে শোনা যায় পরিবারের দ্বিতীয় বোনের নামও। আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিন ভাইবোন ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাই এ দৃশ্য দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রায় প্রতি বছরই হজ লটারি পরিচালনা করি, কিন্তু এক পরিবারের তিন ভাইবোন একসঙ্গে নির্বাচিত হওয়া—এমন ঘটনা আমি কখনও দেখিনি। এটি সত্যিই অলৌকিক।”
হজ লটারির প্রক্রিয়াটি মিসরে অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক। প্রতিবছর লাখো মানুষ হজে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন, কিন্তু কোটা সীমিত হওয়ায় মাত্র কয়েক হাজার মানুষ সুযোগ পান। সরকারি হিসাবে, ২০২৬ সালের জন্য প্রায় ৫০ হাজার মিসরীয়কে নির্বাচিত করা হয়েছে। এই বিশাল প্রতিযোগিতায় এক পরিবারের তিন সদস্যের নাম একসঙ্গে ওঠা অনেকেই একে ‘আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ রহমত’ হিসেবে দেখছেন।
পরিবারটি কায়রোর উপকণ্ঠে বসবাস করেন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বড় ভাই বলেন, “আমরা প্রতিবারই হজের জন্য আবেদন করতাম, কিন্তু কখনো ভাবিনি যে আমরা একসঙ্গে নির্বাচিত হব। যখন প্রথমে বোনের নাম শুনলাম, আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলাম। এরপর আমার নাম ঘোষণার পর আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। কিন্তু যখন ছোট বোনের নামও ঘোষিত হলো, তখন মনে হলো আল্লাহ যেন আমাদের ডেকে নিচ্ছেন।”
মিসরে হজে যাওয়ার জন্য সরকারি লটারির প্রথা বহু পুরনো। প্রতিবছর ইসলামিক অ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয় স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই লটারির আয়োজন করে থাকে। অনলাইন ও অফলাইন উভয়ভাবে আবেদন গ্রহণ করা হয়, এবং আবেদনকারীদের মধ্য থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাম বাছাই করা হয়। নির্বাচিতদের মধ্যে অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মতো হজে যাওয়ার সুযোগ পান।
ধর্ম বিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের ঘটনা মানুষকে বিশ্বাস ও আধ্যাত্মিকতার প্রতি নতুন করে অনুপ্রাণিত করে। মিসরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ইউসুফ হামদি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আল্লাহ যার জন্য যা নির্ধারণ করেন, তা কোনোভাবেই রোধ করা যায় না। এটি ভাগ্য ও বিশ্বাসের অপূর্ব মিলন।”
লটারির ফলাফল ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ শুভেচ্ছা বার্তা পাঠিয়ে তিন ভাইবোনের পরিবারের জন্য দোয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ লিখেছেন, “এটি আমাদের সবার জন্য একটি অনুপ্রেরণা, প্রমাণ করে যে আল্লাহর রহমত অগণিত ও অপ্রত্যাশিত পথে আসে।”
অনেকেই আবার নিজেদের আবেদন অভিজ্ঞতা শেয়ার করে বলেছেন, এই খবর তাঁদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে। মিসরের কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এই ঘটনাটিকে “Year’s Most Heartwarming Hajj Story” বলে আখ্যা দিয়েছে।
Leave a comment