দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছেন। শিক্ষক নেতারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই কর্মসূচি চলবে। শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ১২টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুলিশের হামলার প্রতিবাদে সহকারী শিক্ষকরা মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেন। তারা অভিযোগ করেন, আগের দিনের শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে পুলিশি হামলায় অন্তত দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। আহতদের সুচিকিৎসা ও আটককৃতদের মুক্তির দাবি করেন তারা।
একই সঙ্গে শিক্ষকরা জানান, সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ না এলে রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু হবে। তাদের দাবি— দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ, ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি নিশ্চিত করা।
‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এ কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। সংগঠনগুলো হলো— বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন), বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি) এবং সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ। পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে তৃতীয় ধাপে নিয়োগ পাওয়া সহকারী শিক্ষকরাও এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
শিক্ষক নেতারা বলেন, দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মূলভিত্তি হিসেবে সহকারী শিক্ষকরা মাঠপর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হলেও সহকারী শিক্ষকরা এখনো ১৩তম গ্রেডে রয়েছেন, যা অন্যায় ও অযৌক্তিক।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রায় তিন লাখ ৮৪ হাজার শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। শিক্ষক নেতাদের দাবি, সরকারের উচিত দ্রুত তাদের ন্যায্য দাবি মেনে শিক্ষাক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। তারা বলেন, “আমরা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে চাই, কিন্তু আমাদের সম্মান ও অধিকার নিশ্চিত না হলে তা সম্ভব নয়।”
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালীন রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বিভাগীয় শহরগুলোসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হাজার হাজার শিক্ষক অংশ নিচ্ছেন। তাদের হাতে দেখা গেছে নানা দাবিদাওয়া সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। শিক্ষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সরকারের কাছে স্মারকলিপি পাঠানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করবেন তারা।
Leave a comment