যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম মুসলিম লেফটেন্যান্ট গভর্নর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ঘাজালা হাশমি। দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ভার্জিনিয়ার এই নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী জন রিডকে পরাজিত করে তিনি জয়ী হন। এই জয় শুধু মার্কিন রাজনীতিতে নয়, মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের জন্যও এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ঘাজালা হাশমি ভার্জিনিয়া সিনেটে রাজ্যের ১৫তম জেলা থেকে নির্বাচিত প্রথম মুসলিম ও প্রথম দক্ষিণ এশীয়-আমেরিকান সদস্য। এবার লেফটেন্যান্ট গভর্নর পদে নির্বাচিত হওয়ায় রাজ্যের সিনেট আসনটি শূন্য হবে এবং শিগগিরই সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
২০১৯ সালে রাজনীতিতে যোগ দেন হাশমি। সে বছরই তিনি রিপাবলিকানদের দখলে থাকা একটি সিনেট আসনে চমকপ্রদ জয় পেয়ে রাজনীতির মঞ্চে নিজের অবস্থান দৃঢ় করেন। ২০২৪ সালে তাকে ভার্জিনিয়া সিনেটের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়। প্রজনন অধিকার, গণশিক্ষা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো ডেমোক্র্যাটদের অগ্রাধিকারমূলক ইস্যুতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
ঘাজালা হাশমির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবেশগত ন্যায়বিচার বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছেন। তার রাজনৈতিক দর্শন মূলত সমান সুযোগ ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। তিনি বিশ্বাস করেন, “সমাজের প্রতিটি মানুষ, বিশেষ করে সংখ্যালঘু ও অভিবাসী জনগোষ্ঠী, রাষ্ট্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পাওয়ার যোগ্য।”
১৯৬৪ সালে ভারতের হায়দরাবাদের মালাকপেটে জন্ম নেন ঘাজালা হাশমি। তার বাবা-মা জিয়া হাশমি ও তানভীর হাশমি ছিলেন উচ্চশিক্ষিত। মাত্র চার বছর বয়সে মা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান তিনি । তার বাবা অধ্যাপক জিয়া হাশমি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। পরবর্তীতে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলিনা থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তিনি “সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ”-এর পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
তার মা তানভীর হাশমি ওসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেনস কলেজ থেকে বিএ ও বিইড ডিগ্রি অর্জন করেন। হাশমি হাইস্কুল থেকে ভ্যালেডিক্টোরিয়ান হিসেবে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি জর্জিয়া সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি থেকে বিএ ডিগ্রি এবং আটলান্টার এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমেরিকান সাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। শিক্ষাক্ষেত্রে উজ্জ্বল ভূমিকার কারণে তিনি একাধিক পূর্ণ স্কলারশিপ ও ফেলোশিপ অর্জন করেছেন।
১৯৯১ সালে স্বামী আজহার রফিককে নিয়ে ঘাজালা রিচমন্ড অঞ্চলে বসবাস শুরু করেন। তাদের দুই মেয়ে ইয়াসমিন ও নূর চেস্টারফিল্ড কাউন্টি পাবলিক স্কুল এবং ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। প্রায় ৩০ বছর ধরে ঘাজালা হাশমি শিক্ষকতা করেছেন। তিনি প্রথমে ইউনিভার্সিটি অব রিচমন্ডে এবং পরে রেইনল্ডস কমিউনিটি কলেজে অধ্যাপনা করেন। রেইনল্ডস কলেজে তিনি সেন্টার ফর এক্সেলেন্স ইন টিচিং অ্যান্ড লার্নিং (CETL)-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ঘাজালা হাশমির জয় যুক্তরাষ্ট্রে ধর্মীয় ও জাতিগত বৈচিত্র্যের প্রতীক হিসেবে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তার নির্বাচনী সাফল্য অভিবাসী ও মুসলিম নারীদের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথ আরও উন্মুক্ত করবে। ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. লরা বেন্টন বলেন, “ঘাজালা হাশমির জয় শুধু রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং এটি মার্কিন গণতন্ত্রে অন্তর্ভুক্তির এক উজ্জ্বল প্রতীক।”
বিজয়ের পর এক প্রতিক্রিয়ায় ঘাজালা হাশমি বলেন,“এই জয় তাদের সবার জন্য, যারা বিশ্বাস করে শিক্ষা, ন্যায়বিচার ও সমান সুযোগের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তন সম্ভব।
Leave a comment