ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামে নদীতে গোসলে নেমে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে গ্রামটির কুঠিবাড়ি পাড়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত দুই শিশু একে অপরের প্রতিবেশী ।
মৃতরা হলেন রাজনগর গ্রামের প্রবাসী তারা মিয়ার মেয়ে তাসমিম খাতুন (৫) এবং সোহেল মীরের ছেলে আরিয়ান (৪)। দুজনই একই বয়সী এবং প্রতিদিন বিকেলে একসঙ্গে খেলাধুলা করত বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। রাজনগর গ্রামের কলেজছাত্র তানিম আহম্মেদ জানান, দুপুরে তিন শিশু বাড়ির পাশের নদীতে গোসল করতে যায়। কিছুক্ষণ পর এক শিশু একাই বাড়ি ফিরে আসে, কিন্তু তাসমিম ও আরিয়ান আর ফিরে আসে না।
পরিবারের সদস্যরা শিশু দুজনকে না দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। পরে প্রতিবেশীদের সহায়তায় নদীতে খোঁজ শুরু করলে কিছু সময় পর পানির নিচ থেকে দুই শিশুর নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।
তানিম বলেন, “আমরা খবর পেয়ে নদীর ধারে ছুটে যাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর স্থানীয়রা নদীতে নেমে তাদের লাশ উদ্ধার করে। এমন দৃশ্য কেউ সহ্য করতে পারেনি।”
দুই শিশুর মৃত্যুর খবরে গোটা রাজনগর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, “বিকেলে নদীতে গোসলে নেমে দুই শিশু ডুবে মারা গেছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা (ইউডি কেস) দায়ের করা হয়েছে।”
স্থানীয়দের মতে, রাজনগর গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীটি বর্ষার সময় গভীর হয়ে যায় এবং শিশুদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। যথাযথ সতর্কতা না থাকায় প্রায়ই এমন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। তারা বলেন, নদীর পাড়ে কোনো নিরাপত্তা বেড়া বা সতর্কতা বোর্ড না থাকায় শিশুদের অবাধে সেখানে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে।
গ্রামবাসীর দাবি, শিশুদের নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নদীর বিপজ্জনক অংশগুলোতে সতর্কতা চিহ্ন স্থাপন ও জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া জরুরি। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ১০-১২ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, গ্রামীণ এলাকায় সাঁতার শেখার অভাব, পানির উৎসের কাছাকাছি খেলার প্রবণতা এবং অভিভাবকদের অসতর্কতাই এ ধরনের দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।
তারা পরামর্শ দেন, শিশুদের ছোটবেলা থেকেই সাঁতার শেখানো ও পুকুর-নদীর আশপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হলে এই দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। রাজনগর গ্রামের এই ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিলো—গ্রামীণ এলাকায় শিশুদের নিরাপত্তায় সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ কতটা প্রয়োজন। পরিবারের অসচেতনতা, পর্যাপ্ত নজরদারির অভাব এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি মিলে দুইটি নিষ্পাপ প্রাণ হারাল নদীর জলে।
সমগ্র এলাকায় এখন শুধু একটাই প্রার্থনা—এমন মর্মান্তিক দৃশ্য যেন আর কোনো পরিবারকে দেখতে না হয়।
 
                                                                         
                                                                         
                             
                             
                                 
			             
			             
 
			         
 
			         
 
			         
 
			         
				             
				             
				            
Leave a comment