নারায়ণগঞ্জের বন্দরে বিএনপি নেতা তাওলাদ মাহমুদের ওপর প্রকাশ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার লাঙ্গলবন্দ বাজার এলাকায় এই সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। আহত তাওলাদ মাহমুদ বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
বিএনপি নেতা তাওলাদ মাহমুদ দাবি করেছেন, স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা মনোয়ার হোসেন ও তার অনুসারীরা এই হামলার সঙ্গে জড়িত। তিনি বন্দর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা গেছে, দুপুরের দিকে লাঙ্গলবন্দ বাজার এলাকায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন তাওলাদ মাহমুদ। এ সময় স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা ইকবাল হোসেন ও মনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে ১০–১২ জনের একটি দল তার ওপর হামলা চালায়। হামলাকারীরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাকে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে দ্রুত উদ্ধার করে বন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। চিকিৎসকরা জানান, তার শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে, তবে তিনি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত। আহত তাওলাদ মাহমুদের অভিযোগ, জাতীয় পার্টির স্থানীয় নেতা মনোয়ার হোসেন ও লাভলী মেম্বারের “ভিত্তিহীন অপপ্রচারের” প্রতিবাদে তিনি সকালে একটি সভার আয়োজন করেছিলেন। সভা শেষে লাঙ্গলবন্দ বাজারে যাওয়ার পথে পরিকল্পিতভাবে তার ওপর হামলা চালানো হয়।
তিনি বলেন, “আমি কোনো ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে জড়িত নই। রাজনৈতিকভাবে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে এই হামলা চালানো হয়েছে।” এই ঘটনায় ইকবাল হোসেন (৪৫), মনোয়ার মেম্বার (৩৮), লাভলী মেম্বার (৩৫), আমান উল্লাহ (৪৫), বাহা উদ্দিন (৪৩) ও লাকি (৩২)–সহ মোট ছয়জনের নাম উল্লেখ করে বন্দর থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, “বিএনপি নেতা তাওলাদ মাহমুদের ওপর হামলার বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। পুলিশ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে। আইনি প্রক্রিয়া চলছে।”
ঘটনার পর এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।অন্যদিকে, জাতীয় পার্টির স্থানীয় শাখা দাবি করেছে, এ হামলার সঙ্গে তাদের দলের কেউ জড়িত নয়। তাদের বক্তব্য, ঘটনাটি “ব্যক্তিগত বিরোধ” থেকে ঘটেছে এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।
লাঙ্গলবন্দ এলাকার সাধারণ মানুষ হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এলাকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে উত্তেজনা বেড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মালেক বলেন, “দিন দুপুরে এভাবে একজন রাজনীতিবিদকে কুপিয়ে জখম করা ভয়াবহ ঘটনা। আমরা নিরাপত্তা চাই।”
নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক সহিংসতার এই সর্বশেষ ঘটনা স্থানীয় রাজনীতির অস্থিরতা ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার নিশ্চিতের আশ্বাস দেওয়া হলেও, সাধারণ নাগরিকেরা নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত।
Leave a comment