জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক সফরে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে এবার তাঁর সফরকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে সফরসঙ্গীর দীর্ঘ তালিকা। সরকারি নথি অনুযায়ী সফরসঙ্গীর সংখ্যা ১০৪ জন হলেও, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রণীত আনুষ্ঠানিক পুস্তিকায় এই সংখ্যা ৬২। দুটি তালিকার এ অমিল স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
এ সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রয়েছেন চার উপদেষ্টা, বিশেষ দূত, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদার কর্মকর্তা, ১৯ জন নিরাপত্তাকর্মী ও অন্তত ৪৭ জন সরকারি কর্মকর্তা। সবচেয়ে আলোচিত হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের অংশগ্রহণ। বিএনপি, জামায়াতে ইসলাম ও জাতীয় নাগরিক পার্টির মোট ছয় নেতা সফরসঙ্গী হয়েছেন। রাজনৈতিক সরকারের আমলে এমন অংশগ্রহণ পরিচিত হলেও, নির্দলীয় অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এই অন্তর্ভুক্তি নিয়ে নানা মহলে সমালোচনা উঠেছে।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে—আসলে কি অন্তর্বর্তী সরকারও পূর্বের রাজনৈতিক সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখছে? তাদের মতে, ব্যয় সংকোচনের ঘোষণা দেওয়া সত্ত্বেও সফরসঙ্গীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালে প্রধান উপদেষ্টার সফরে সরকারি নথি অনুযায়ী সঙ্গী ছিলেন ৮০ জনের বেশি, এবার সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪-এ।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারপ্রধানের বক্তৃতার সময় মাত্র কয়েকজন সফরসঙ্গীর আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। অথচ বড় বহর নিয়েই প্রতিবছর সফর হয়ে আসছে। ২০১৪ ও ২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গীর সংখ্যা যথাক্রমে ১৮০ ও ২৯২ জনে পৌঁছেছিল।
সফরের শুরুতেই নিউইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে সফরসঙ্গী রাজনৈতিক নেতাদের হেনস্তার ঘটনাও নতুন করে বিতর্ক উসকে দিয়েছে। এ নিয়ে সমালোচকরা বলছেন, শুধু সংখ্যার বহর নয়, প্রস্তুতি ও কূটনৈতিক সমন্বয়েও দুর্বলতা স্পষ্ট হয়েছে।
অতীতের মতো এবারও সরকারি নথি ও পুস্তিকার মধ্যে পার্থক্য থাকায় অনেকে মনে করছেন, এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া জরুরি। অন্যথায় নির্দলীয় সরকারের ঘোষিত ব্যয়সংকোচন ও ভিন্নধর্মী শাসনধারার প্রতিশ্রুতি প্রশ্নের মুখে পড়বে।

Leave a comment