রবার্ট রেডফোর্ডের প্রয়াণে স্তব্ধ হলিউড-
হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা, পরিচালক ও পরিবেশকর্মী রবার্ট চার্লস রেডফোর্ড জুনিয়র আর নেই। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ অঙ্গরাজ্যের প্রোভো শহরে নিজ বাসভবনে ঘুমের মধ্যেই শান্তিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম পিপল ও ইন্ডিপেনডেন্ট রেডফোর্ডের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
এক শিল্পীর জন্ম ও যাত্রা-
১৯৩৬ সালের ১৮ আগস্ট ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তা মনিকায় জন্মগ্রহণ করেন রবার্ট রেডফোর্ড। নিউইয়র্কের আমেরিকান একাডেমি অব ড্রামাটিক আর্টসে পড়াশোনা শেষে ১৯৫৯ সালে টেল স্টোরি নাটকের মাধ্যমে ব্রডওয়েতে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৩ সালে বেয়ারফট ইন দ্য পার্ক নাটকে অভিনয় করে তিনি আলোচনায় আসেন, যা ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রে রূপ নেয়।
হলিউডের স্বর্ণযুগের নায়ক-
সত্তরের দশকে রেডফোর্ড হলিউডের শীর্ষ নায়কদের কাতারে উঠে আসেন। ১৯৭৩ সালের দ্য স্টিং চলচ্চিত্রে তার অভিনয় তাকে অস্কারের সেরা অভিনেতার মনোনয়ন এনে দেয়। ১৯৮০ সালে অর্ডিনারি পিপল পরিচালনা করে তিনি অস্কার জেতেন সেরা পরিচালকের ক্যাটাগরিতে। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে কুইজ শো পরিচালনার জন্যও অস্কার মনোনয়ন পান।
১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া আউট অব আফ্রিকা সিনেমায় মেরিল স্ট্রিপের বিপরীতে তার অভিনয় বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য আনে। ছবিটি সাতটি বিভাগে অস্কার জেতে, যার মধ্যে সেরা চলচ্চিত্রও ছিল।
অভিনয়জীবনের শেষ কাজ ছিল ২০১৮ সালের দ্য ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য গান। এরপর তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনয় থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
স্বাধীন চলচ্চিত্রের পথপ্রদর্শক-
রেডফোর্ড শুধু অভিনেতা বা পরিচালকই নন, স্বাধীন চলচ্চিত্র আন্দোলনের অন্যতম পৃষ্ঠপোষকও ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসব, যা যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম স্বাধীন চলচ্চিত্র উৎসবে পরিণত হয় এবং অসংখ্য তরুণ চলচ্চিত্র নির্মাতাকে পরিচিতির সুযোগ করে দেয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা-
রেডফোর্ডের ঝুলিতে রয়েছে অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। ২০০২ সালে তিনি পান আজীবন সম্মানসূচক অস্কার। এছাড়া তার সাফল্যের তালিকায় রয়েছে তিনটি গোল্ডেন গ্লোব, একটি বাফটা, একটি স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ড এবং ২০১০ সালে ফ্রান্সের লেজিওঁ দ্য নরের শেভালিয়ে খেতাব। ২০১৪ সালে টাইম সাময়িকী তাকে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির একজন হিসেবে উল্লেখ করে এবং তাকে “ইন্ডি চলচ্চিত্রের গডফাদার” আখ্যা দেয়। ২০১৬ সালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম লাভ করেন।
ব্যক্তিজীবন-
১৯৫৮ সালে রেডফোর্ড বিয়ে করেন লোলা ভ্যান ওয়াগেনেনকে। তাদের ঘরে চার সন্তান জন্ম নিলেও প্রথম সন্তান স্কট জন্মের দুই মাস পর মারা যায়। দীর্ঘ ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি ঘটে ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তিনি জার্মান শিল্পী সিবিল জাগার্সকে বিয়ে করেন। তবে ২০২০ সালে তার ছেলে জেমস রেডফোর্ড ক্যানসারে মারা যান।
বিশ্ব চলচ্চিত্রে শোক-
রবার্ট রেডফোর্ডের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অভিনয়, পরিচালনা, স্বাধীন চলচ্চিত্রের পৃষ্ঠপোষকতা এবং পরিবেশ আন্দোলনে তার দীর্ঘ অবদান চলচ্চিত্র ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। হলিউড আজ হারাল তার এক উজ্জ্বলতম নক্ষত্রকে, যিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে প্রভাবিত করে গেছেন তার কাজ, ব্যক্তিত্ব ও দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে।
Leave a comment