নেপালে দুর্নীতিবিরোধী সহিংস বিক্ষোভে নিহতের সংখ্যা বেড়ে কমপক্ষে ৭২ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও অন্তত ১৯১ জন। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে নেপালের প্রধান সচিব একনারায়ণ আরিয়াল এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, “সরকার পতনের পর যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তার পূর্ণ চিত্র এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৭২ জন নিহত হয়েছেন।”
চলতি সপ্তাহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, দুর্নীতি ও দুর্বল শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হয়। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দ্রুত সহিংস রূপ নেয়। পুলিশি দমন-পীড়নের মধ্যেই বহু মানুষ প্রাণ হারান।
পরদিন (৯ সেপ্টেম্বর) পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়, যখন ক্ষুব্ধ জনতা সংসদ ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। উত্তেজনা চরমে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর সেনাবাহিনী রাস্তায় নেমে রাজধানীসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো নিয়ন্ত্রণে নেয়।
পরবর্তীতে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কির নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয় এবং তারা কার্যক্রম শুরু করে।
নেপালের সেনাবাহিনী শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) জানায়, বিক্ষোভ চলাকালে লুট হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ১০০টিরও বেশি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। দেশজুড়ে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনী যৌথভাবে নিরাপত্তা জোরদার করেছে।
পুলিশ মুখপাত্র বিনোদ ঘিমিরে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপিকে বলেন, সহিংসতার সময় একাধিক কারাগার থেকে প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ কয়েদি পালিয়ে যায়। এর মধ্যে শুক্রবার পর্যন্ত ১২ হাজার ৫৩৩ জন এখনও পলাতক রয়েছে। তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে কয়েকজন পালিয়ে যাওয়া কয়েদিও ছিলেন। পালানোর সময় অথবা পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তারা প্রাণ হারান।
পালিয়ে যাওয়া বহু কয়েদি প্রতিবেশী দেশ ভারতের সীমান্তে প্রবেশের চেষ্টা করলেও ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের অধিকাংশকেই আটক করেছে। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
নেপালের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রতিবেশী দেশগুলোসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। বিশেষ করে চীন ও ভারতের নজর এখন কাঠমান্ডুর দিকে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিক্ষোভে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং স্বচ্ছ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
নেপালে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন সরকার পতন, সংসদ ভবনে অগ্নিসংযোগ, কয়েদি পলায়নসহ ভয়াবহ অস্থিরতার জন্ম দিয়েছে। নিহত ও আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় দেশটির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও গভীর হচ্ছে।
Leave a comment